ট্রাম্প: বিশ্বকে উল্টে দেওয়ার খেলায়, ইতিহাসের কঠিন পাঠ!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক নীতি: বিশ্ব ব্যবস্থা পরিবর্তনের পথে?

বহু বছর ধরে, বিশ্ব একটি নির্দিষ্ট নিয়মের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে আসছে, যা বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সম্পর্ককে উৎসাহিত করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ব শান্তি বজায় রাখা এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সহজ করা।

কিন্তু সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপ এই ব্যবস্থার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের কিছু নীতি, যেমন বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি, মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল করা, এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি, এই “নিয়ম-ভিত্তিক বিশ্ব ব্যবস্থা”-কে দুর্বল করে দিচ্ছে।

বাণিজ্য শুল্কের ক্ষেত্রে, ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেন যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এবং এর প্রতিকার হিসেবে তিনি শুল্ক আরোপ করেন।

এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজ না হলে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথ কঠিন হয়ে পড়ে।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গে ট্রাম্পের মন্তব্যও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি প্রায়ই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি নরম মনোভাব দেখিয়েছেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এই যুদ্ধের জন্য দায়ী করেছেন।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই ধরনের বক্তব্য, দুর্বল দেশগুলোর প্রতি শক্তিশালী দেশগুলোর আগ্রাসনকে উৎসাহিত করতে পারে। এর ফলে, বিশ্বজুড়ে সংঘাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে, যা আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচকরা মনে করেন, তিনি “ক্ষমতাই সব” – এই ধারণায় বিশ্বাসী।

তারা আশঙ্কা করেন, ট্রাম্পের এই ধরনের মনোভাব বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব ফেলবে।

উদাহরণস্বরূপ, গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করা বা কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করা – এই ধরনের পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রচলিত রীতি-নীতির পরিপন্থী।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যখন কোনো দেশ একতরফাভাবে বিশ্ব ব্যবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে, তখন তার ফল ভালো হয়নি।

জার্মানির কাইজার দ্বিতীয় উইলহেলম বা ইতালির বেনিতো মুসোলিনি-র আগ্রাসী নীতি বিশ্বকে ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।

ট্রাম্পের নীতিও যদি সেই পথে পরিচালিত হয়, তাহলে বিশ্ব একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারে।

তবে, ট্রাম্পের কিছু সমর্থক মনে করেন, তার কঠোর নীতিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করছে।

তারা বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়াতে এবং দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চেষ্টা করছেন।

কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই নীতিগুলো স্বল্পমেয়াদে কিছু সুবিধা দিতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

বর্তমানে, ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা করছেন।

যদি তিনি নির্বাচিত হন, তাহলে তার আন্তর্জাতিক নীতি কেমন হবে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে।

অনেকের আশঙ্কা, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, যা বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *