যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম ১০০ দিনের কার্যক্রম পর্যালোচনা।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তার প্রথম ১০০ দিনের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা চলছে। এই অল্প সময়ে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিশেষ করে নির্বাহী আদেশ জারি, বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন এবং পররাষ্ট্র নীতিতে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ট্রাম্পের নেওয়া প্রধান পদক্ষেপগুলো:
নির্বাহী আদেশ: প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প অন্যান্য প্রেসিডেন্টের তুলনায় অনেক বেশি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। তথ্যানুসারে, তিনি অন্তত ১৪২টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
নির্বাহী আদেশ হলো প্রেসিডেন্টের দেওয়া এমন নির্দেশ, যা কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই সরাসরি ফেডারেল সংস্থাগুলোর ওপর প্রয়োগ করা যায়। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারির ক্যাপিটল হিলের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৫০০ জনের বেশি ব্যক্তিকে ক্ষমা করা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization – WHO) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করা এবং মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘আমেরিকা উপসাগর’ রাখা।
অর্থনৈতিক নীতি ও শুল্ক: ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিতে এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। তিনি বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন, যা আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
এর মূল লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, দেশটির প্রতি ‘অন্যায্য’ বাণিজ্য নীতিগুলোর প্রতিকার করা এবং উৎপাদন শিল্পকে দেশে ফিরিয়ে আনা।
যেমন, গত ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এর মধ্যে কানাডার জ্বালানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এছাড়া, চীনের পণ্যের ওপরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। পরবর্তীতে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানির ওপরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যেখানে চীনের জন্য এই হার ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত ছিল।
বৈদেশিক নীতি: ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতিতেও পরিবর্তন এসেছে। তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
ইউক্রেন ইস্যুতে, ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেওয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করে ইউরোপীয় দেশগুলোকে ইউক্রেনকে আরও বেশি সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন। ৩রা মার্চ তিনি ইউক্রেনকে সব ধরনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেন, যা মিত্র দেশগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
মধ্যপ্রাচ্যে, ট্রাম্প গাজা উপত্যকাকে পুনর্গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। একইসঙ্গে, তিনি ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত: ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় অন্তত ২,৩৯২ জন এবং পশ্চিম তীরে ১০৫ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এছাড়া, ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়ে বা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আরও প্রায় ৩,০০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইয়েমেনে সামরিক অভিযান: ট্রাম্পের প্রশাসন ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছে। ১৫ই মার্চ থেকে ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে সেখানে অন্তত ২০৭টি মার্কিন হামলা হয়েছে, যাতে অন্তত ২০৯ জন নিহত হয়েছে।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি: ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যার মধ্যে ব্যাপক অভিবাসন বিরোধী পদক্ষেপ এবং ২০২১ সালের ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গাকারীদের মুক্তি দেওয়ার মতো বিষয়গুলো ছিল।
তবে, তার দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর কতটুকু পূরণ হয়েছে, তা এখনো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প তার দেওয়া ৭৪টি প্রতিশ্রুতির মধ্যে ৬টি পূরণ করেছেন, ১টি ভঙ্গ করেছেন এবং ৪টির বাস্তবায়ন এখনো প্রক্রিয়াধীন। বাকি ৪১টি প্রতিশ্রুতির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা