মে মাসের আকাশে: চমকানো দৃশ্য! যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে!

আসন্ন মে মাসে রাতের আকাশে দেখা মিলবে অনেক আকর্ষণীয় দৃশ্যের। গ্রহ, নক্ষত্র, উল্কাপাত থেকে শুরু করে রাতের চাঁদের মনোমুগ্ধকর রূপ— নভোচারীদের জন্য এই মাসটি হতে চলেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আসুন, জেনে নিই এই মাসে রাতের আকাশে কী কী চমক অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

শুরুতেই বলি, আগামী ৩রা মে, সন্ধ্যার আকাশে পশ্চিম দিকে তাকালে দেখা যাবে এক অপূর্ব দৃশ্য। চাঁদ আর মঙ্গল গ্রহের কাছাকাছি অবস্থান করবে মৌচাক নক্ষত্রপুঞ্জ (Beehive Cluster)।

খালি চোখে হয়তো কয়েকটি তারা দেখা যাবে, তবে ভালো দূরবীক্ষণ যন্ত্র থাকলে এর ভেতরের অনেক তারা স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। প্রায় ৫৭৭ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই নক্ষত্রপুঞ্জে রয়েছে হাজারেরও বেশি তারা।

এরপর ৫ ও ৬ই মে তারিখে দেখা যাবে উল্কাপাতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। এই সময়ে সক্রিয় থাকবে ইটা অ্যাকুয়ারিড (Eta Aquariid) উল্কাবৃষ্টি।

হ্যালির ধূমকেতুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এই উল্কাবৃষ্টির কারণে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১০টি উল্কা দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে দক্ষিণ গোলার্ধে দৃশ্যমানতা বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

আলোর ঝলকানির কারণে রাতের আকাশে এদের গতি বিশেষভাবে চোখে পড়ে।

৬ই মে তারিখে শনিগ্রহের গ্রহণ (Equinox) ঘটবে। এই বিরল ঘটনার কারণে সূর্যের আলো সরাসরি শনির বলয়ের উপর পড়বে এবং এর ফলে বলয়টিকে প্রায় দেখাই যাবে না।

এটি শনিগ্রহ পর্যবেক্ষণের এক দারুণ সুযোগ, যখন এর বলয়গুলো খুব ক্ষীণ ও অনুজ্জ্বল দেখাবে।

১১ই মে তারিখে রাতের আকাশে উজ্জ্বল একটি গোলকাকার স্তবক (Globular cluster) দৃশ্যমান হবে। এই ধরনের স্তবকে লক্ষ লক্ষ তারা একসঙ্গে গুচ্ছাকারে থাকে।

এই মাসে আপনারা Messier 5 (M5) নামের একটি গোলকাকার স্তবকের দিকে তাকাতে পারেন। এটি প্রায় ২৫,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এবং দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এর ভেতরের তারাগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।

১২ই মে, রাতের আকাশে দেখা যাবে ‘ফ্লাওয়ার মুন’ বা ফুলের চাঁদ। সাধারণত, মে মাসে ফুল ফোটার মরসুম শুরু হয় বলে এই সময়ে রাতের আকাশে দেখা যাওয়া পূর্ণিমার চাঁদকে ‘ফ্লাওয়ার মুন’ বলা হয়।

এপ্রিল মাসের পূর্ণিমার চাঁদের মতোই, এটি আকারে সামান্য ছোট দেখাবে।

২২শে মে তারিখে শনিগ্রহ এবং চাঁদের কাছাকাছি আসার দৃশ্য দেখা যাবে। সেদিন রাতের আকাশে, চাঁদ থেকে মাত্র ২ ডিগ্রি দূরে শনিগ্রহকে দেখা যাবে।

খালি চোখে হয়তো তাদের আলাদা করা কঠিন হবে, তবে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে দেখলে শনির বলয়গুলো স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।

যদি রাতের আকাশ পরিষ্কার থাকে, তাহলে ২৬শে মে তারিখে রাতের আকাশে ভালোভাবে তারা দেখা যাবে। এই সময় আকাশে নতুন চাঁদ উঠবে, যার ফলে রাতের আকাশে আলো কম থাকবে এবং অন্যান্য নক্ষত্র, গ্যালাক্সি ও নীহারিকা ভালোভাবে দেখা যাবে।

২৮শে মে তারিখে আরেকটি গোলকাকার স্তবক, Messier 4 (M4), ভালোভাবে দেখা যাবে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের গোলকাকার স্তবক, যা প্রায় ৫,৫০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।

এখানে প্রায় ১ লক্ষ তারার সমাবেশ রয়েছে।

সবশেষে, ৩১শে মে তারিখে শুক্রগ্রহ তার সর্বোচ্চ পশ্চিম দিগন্তে (Greatest Western Elongation) অবস্থান করবে।

এর ফলে ভোরের আকাশে শুক্রগ্রহকে উজ্জ্বলভাবে দেখা যাবে। সূর্য এবং চাঁদের পরেই, শুক্রগ্রহ রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক।

সুতরাং, যারা মহাকাশ ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই মাসটি হতে চলেছে বিশেষ আকর্ষণীয়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে, দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে এই সুন্দর দৃশ্যগুলো উপভোগ করা যেতে পারে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *