লন্ডনের পাতাল রেলে ২০০৫ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত একটি মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে একটি নতুন নাটক। ‘সাসপেক্ট: দ্য শুটিং অফ জঁ শার্ল দে মেনেজেস’ (Suspect: The Shooting of Jean Charles de Menezes) নামের এই নাটকটি সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে এবং এরই মধ্যে দর্শক ও সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
নাটকটি মূলত ২০০৫ সালের ২২শে জুলাই স্টকওয়েল টিউব স্টেশনে সংঘটিত এক হৃদয়বিদারক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। সেদিন, পুলিশের গুলিতে নিহত হন একজন নিরীহ মানুষ, জঁ শার্ল দে মেনেজেস।
ব্রাজিলের নাগরিক, ২৭ বছর বয়সী জঁ শার্ল দে মেনেজেস পেশায় ছিলেন একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান। ঘটনার দিন, তাকে ভুল করে একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী সন্দেহে গুলি করে হত্যা করা হয়।
নাটকটি এই ঘটনার পেছনের কারণ, পুলিশের ভুল পদক্ষেপ, এবং ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতিগুলো অত্যন্ত স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।
নাটকটির প্রধান আকর্ষণ হলো ঘটনার ভয়াবহতা এবং তাৎক্ষণিকতা। ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিটির অসহায়ত্ব এবং পুলিশের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সৃষ্ট ট্র্যাজেডি দর্শকদের নাড়া দেয়।
ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, পুরো প্রক্রিয়াটি এমনভাবে চিত্রিত হয়েছে যা দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
নাটকটি নির্মাণ করেছেন জেফ পোপ। তিনি এই ঘটনার প্রতিটি দিক গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছেন এবং পুলিশের কিছু ভুলত্রুটিসহ ঘটনার পেছনের কারণগুলো তুলে ধরেছেন।
বিশেষ করে, ৭ই জুলাই, ২০০৫-এ লন্ডনের পাতাল রেল ও বাসে হওয়া বোমা হামলার প্রেক্ষাপট এবং এর পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অতি-সতর্কতা ও উদ্বেগের বিষয়টিও নাটকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
নাটকে দেখা যায়, ঘটনার পরে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ কীভাবে নিজেদের সম্মান রক্ষার চেষ্টা করেছে। দে মেনেজেস সম্পর্কে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়, যা জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
এই বিষয়গুলো এমনভাবে দেখানো হয়েছে যে, একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার কীভাবে খারাপ ফল ডেকে আনতে পারে, তা স্পষ্ট হয়।
নাটকে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার স্যার ইয়ান ব্লেয়ার এবং ডেপুটি কমিশনার ক্রেসিডা ডিক-এর চরিত্রগুলোও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। স্যার ইয়ান ব্লেয়ারকে এখানে একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে, যিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন।
অন্যদিকে, ক্রেসিডা ডিক-কে দেখানো হয়েছে ঘটনার তদন্তে তার নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং পরবর্তীতে বিষয়টিকে অস্বীকার করার প্রবণতা।
নাটকটি শুধুমাত্র একটি দুঃখজনক ঘটনার চিত্র নয়, বরং এটি ভুল তথ্যের বিস্তার, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মানবিক ত্রুটিগুলির একটি প্রতিচ্ছবি। এটি দর্শকদের মনে গভীর প্রশ্ন জাগায় এবং ন্যায়বিচারের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে।
বর্তমানে নাটকটি ডিজনি প্লাস (Disney+) -এ দেখা যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian