চীনের কলকারখানাগুলোতে বড় ধাক্কা, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে উৎপাদন কমছে।
যুক্তরাষ্ট্রের (US) বাণিজ্য শুল্কের কারণে চীনের (China) কারখানাগুলোতে উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এপ্রিল মাসে দেশটির উৎপাদন খাতের কার্যক্রম গত ১৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে।
দেশটির ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিক্সের (National Bureau of Statistics – NBS) তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (PMI) দাঁড়িয়েছে ৪৯.০ তে।
সূচক ৫০ এর নিচে নামলে উৎপাদন সংকুচিত হচ্ছে বলে ধরা হয়। ডিসেম্বরের পর এটিই সবচেয়ে দুর্বল অবস্থা।
এনবিএসের একজন শীর্ষস্থানীয় পরিসংখ্যানবিদ ঝাও কিংহে এক বিবৃতিতে জানান, কারখানার কার্যক্রমে এই সংকোচনের মূল কারণ হলো বাইরের পরিবেশের আকস্মিক পরিবর্তন এবং অন্যান্য বিষয়গুলো।
চীনের অর্থনীতি বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং দীর্ঘস্থায়ী আবাসন সংকট—উভয় ক্ষেত্রেই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত দেশটির রপ্তানি এবং উৎপাদন নির্ভর অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
গত মাসেই চীনা প্রস্তুতকারকরা এই উচ্চ শুল্কের চাপ অনুভব করতে শুরু করে, কারণ অনেক অর্ডার বাতিল হয় এবং উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয় তারা। এতে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
যদিও চীনের পরিষেবা এবং নির্মাণ খাতে সামান্য উন্নতি দেখা গেছে, কিন্তু নতুন রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই সূচকটি দাঁড়িয়েছে ৪৪.৭-এ, যা ২০২০ সালের শেষ দিক থেকে কভিড-১৯ মহামারীর সময়কালীন অবস্থার কাছাকাছি।
মর্গান স্ট্যানলির প্রধান চীন অর্থনীতিবিদ রবিন সিং এক গবেষণা প্রতিবেদনে লিখেছেন, পিএমআই-এর এই পতন শুল্কের প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়, যার ফলে বাইরের চাহিদা কমে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা মনে করি, শুল্কের প্রভাব চলতি ত্রৈমাসিকে সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে, কারণ অনেক রপ্তানিকারক উচ্চ শুল্কের অনিশ্চয়তার কারণে যুক্তরাষ্ট্রগামী তাদের উৎপাদন ও চালান বন্ধ করে দিয়েছে।
সমগ্রভাবে, নীতি কাঠামো এখনও প্রতিক্রিয়ামূলক এবং সরবরাহ-কেন্দ্রিক, যা শুল্কের ধাক্কা মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়।”
অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, চীনের সরকার আগামী মাসগুলোতে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে আর্থিক ও মুদ্রানীতিকে আরও জোরদার করবে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেইজিং গত বছরের শেষ দিক থেকে কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে, যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোর জন্য ঋণের সহজলভ্যতা এবং অভ্যন্তরীণ ভোগ বৃদ্ধি অন্যতম।
তবে, সরকার এখনও পর্যন্ত দেশব্যাপী বড় ধরনের কোনো উদ্দীপনা ঘোষণা করেনি। তারা বরং নির্দিষ্ট কিছু খাতের ওপর নজর দিচ্ছে, যেমন—ভোগ বাড়ানো এবং রপ্তানিকারকদের চাপ কমানো।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের (National Development and Reform Commission) ভাইস চেয়ারম্যান ঝাও চেনসিন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানোর জন্য বেইজিংয়ের হাতে পর্যাপ্ত নীতিগত মজুদ রয়েছে এবং তারা ইতোমধ্যে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।
অন্যদিকে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি করার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির মুখে নতি স্বীকার করলে তা আগ্রাসকদের আরও উৎসাহিত করবে।
রিও ডি জেনিরোতে এক বৈঠকের বাইরে তাঁর এই মন্তব্য, যা চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভিডিওর প্রতিধ্বনি ছিল।
ভিডিওটিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আমেরিকার “গুণ্ডা” নেতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
অন্যদিকে, এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, চীন ১৪৫ শতাংশ শুল্ক পাওয়ার যোগ্য এবং বেইজিংকেই এর বোঝা বহন করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন