আশ্চর্য পরিবর্তন! কেন লেখকেরা বই ছেড়ে গেমের দিকে ঝুঁকছেন?

বর্তমান বিশ্বে সাহিত্য এবং ভিডিও গেমের জগৎ যেন একে অপরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ঔপন্যাসিকরা যেমন গেমের গল্প লিখছেন, তেমনই গেমের লেখকরা ঝুঁকছেন উপন্যাসের দিকে। এই পরিবর্তনের কারণ কী, এবং এর প্রভাবই বা কী, তাই নিয়ে আজকের আলোচনা।

লেখকদের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা সব সময়ই একটা বড় চিন্তার বিষয়। বই লিখে সংসার চালানো কঠিন, এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি। যুক্তরাজ্যে লেখকদের একটি সংস্থার সমীক্ষা বলছে, পেশাদার লেখকদের বছরে গড় আয় মাত্র ৭,০০০ পাউন্ড।

তাই, অনেকেই এখন বিকল্প আয়ের পথ খুঁজছেন। ভিডিও গেমের জগতে লেখার কাজ তাঁদের কাছে সেই সুযোগ এনে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ম্যালরি মার্লো নামের একজন রোমান্স লেখক, যিনি তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘লাভ অ্যান্ড আদার কনস্পিরেসিজ’-এর জন্য বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি বর্তমানে ভিডিও গেমের জন্য লেখেন, যা তাঁর আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

অন্যদিকে, গেমের লেখকদের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। অনেক সময় তাঁদের চাকরি হারাতে হয়। গেম ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্সের (GDC) একটি রিপোর্ট বলছে, গত বছর প্রায় ২০ শতাংশ গল্পকার ও চিত্রনাট্যকার কাজ হারিয়েছেন।

তাই, গেমের অনেক লেখকও এখন অন্য সুযোগের দিকে তাকাচ্ছেন।

তবে, এই দুই মাধ্যমের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি হওয়ার আরও কিছু কারণ রয়েছে। লেখকরা বলছেন, উপন্যাস লেখার একঘেয়েমি কাটাতে গেমের জগতে কাজ করা তাঁদের জন্য সহায়ক। আবার, গেমের জটিল কাঠামো তৈরি করতে পারার আনন্দও অনেক।

জো ডানথর্ন নামের একজন লেখক উপন্যাস, কবিতা এবং স্মৃতিকথা লিখেছেন। তিনি একটি বড় বাজেটের ভিডিও গেমের জন্য কাজ করেছিলেন, যদিও সেটি শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। ডানথর্নের মতে, উপন্যাস লেখার একাকীত্ব থেকে মুক্তি পেতে তিনি প্রতিদিন অফিসে যেতে পছন্দ করতেন। গেমের ডিজাইনারদের সঙ্গে কাজ করতেও তাঁর ভালো লাগত।

অন্যদিকে, শার্না জ্যাকসন, যিনি শিশুদের জন্য উপন্যাস লেখেন, বলেছেন, গেমের ক্ষেত্রে অনেক শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা হয়তো কখনোই শোনা যায় না। কারণ, গেমাররা খেলার সময় বিভিন্ন পথে এগিয়ে যায়। তাঁর মতে, গেমের কিছু সেরা কাজ হয়তো কেবল কয়েকজন খেলোয়াড়ের কাছেই পৌঁছায়।

তবে, বই এবং গেমের সামাজিক অবস্থান নিয়েও লেখকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। জিম মুনরোর মতে, বইয়ের সংস্কৃতিগত মূল্যায়ন গেমের চেয়ে অনেক বেশি। তিনি আরও বলেন, “গেমের লেখকরা সাধারণত সেই কারণে এখানে কাজ করেন, কারণ গেমের সামাজিক মর্যাদা কম।”

অন্যদিকে, নাওমি অ্যাল্ডারম্যানের উপন্যাস ‘দ্য পাওয়ার’ এবং তাঁর তৈরি করা গেম ‘জম্বিস, রান!’ একই সময়ে পুরস্কার জিতেছিল। কিন্তু বইটির পুরস্কার সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলেও, গেমের পুরস্কার খুব কমই আলোচনায় এসেছিল।

এই ভিন্নতা সত্ত্বেও, গেমের জগতে কাজ করার কিছু সুবিধা রয়েছে। হ্যারি জোসেফিন জাইলসের মতে, গেম এখনো নতুন মাধ্যম, তাই এর নিয়মকানুন সেভাবে তৈরি হয়নি। লেখকরা এখানে নতুন কিছু চেষ্টা করার সুযোগ পান।

সবশেষে, এটা স্পষ্ট যে, আজকের তরুণ লেখকেরা ছোটবেলা থেকেই গেম খেলে বড় হয়েছেন। তাই, তাঁরা সহজেই এই দুটি মাধ্যমের মধ্যে আসা যাওয়া করতে পারেন। তাঁদের কাছে একটি অন্যটির চেয়ে ‘ভালো’ বা ‘খারাপ’ নয়।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *