জীবনে সুখী হওয়া এক জিনিস, আর পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
ভালো জীবন যাপনের মাপকাঠি শুধু ব্যক্তিগত সুখের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। স্বাস্থ্য, আর্থিক নিরাপত্তা, জীবনের অর্থ এবং সম্পর্ক—এগুলো মিলেই একজন মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে।
গবেষণা বলছে, বিশ্বের অনেক দেশেই মানুষের ভালো থাকার ধারণা, নিছক হাসিখুশি থাকার চেয়েও গভীর কিছু। ‘গ্লোবাল ফ্লারিশিং স্টাডি’ নামের এই গবেষণা অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মানুষজন ভালো আছেন এমন দেশের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া।
এর পরেই আছে মেক্সিকো এবং ফিলিপাইন।
তবে, এই তালিকায় অনেক দেশই, যারা সাধারণত সুখী দেশের তালিকায় উপরের দিকে থাকে, তারা পিছিয়ে রয়েছে। যেমন, সুইডেন বা আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলো এই তালিকায় মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে।
গবেষণাটি মূলত ২২টি দেশ এবং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং-এ চালানো হয়েছে।
গবেষণার প্রধান এবং টেক্সাসের বেয়লর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বায়রন জনসন বলেন, এই গবেষণার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর বিশালতা।
সারা বিশ্বের প্রায় ২০৭,০০০ মানুষের ওপর, ৪০টির বেশি ভাষায় এই গবেষণা চালানো হয়েছে। যা পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় ৬৪ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফেলিক্স চেং-এর মতে, যদিও এই গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবুও বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই গবেষণা এখনই শেষ হচ্ছে না। আগামী পাঁচ বছর ধরে তারা অংশগ্রহণকারীদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করবেন এবং ভালো জীবনের কারণগুলো আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করবেন।
গবেষণায় একটি বিষয় বিশেষভাবে চোখে পড়েছে। সেটি হলো, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভালো থাকার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম।
অধ্যাপক ড. টাইলার ভ্যানডারউইলের মতে, “এই তথ্য কিছুটা উদ্বেগজনক। কারণ, আমরা দেখছি, ২২টি দেশের গড় হিসাব করলে, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভালো থাকার অনুভূতি বাড়ে।
অর্থাৎ, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এটি কম দেখা যাচ্ছে।”
তবে, পোল্যান্ড ও তানজানিয়ার মতো কিছু দেশে তরুণদের মধ্যে ভালো থাকার প্রবণতা বেশি। সম্ভবত উন্নত দেশগুলোতে ভালো চাকরি পাওয়ার প্রতিযোগিতার কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়ে।
সামাজিক গতিশীলতার অভাবও এর একটি কারণ হতে পারে, যেখানে কঠোর পরিশ্রমের ফল পাওয়া কঠিন।
গবেষণায় ভালো থাকার বিষয়টি মূল্যায়নের জন্য ৬টি প্রধান ক্ষেত্রকে বিবেচনা করা হয়েছে: সুখ, স্বাস্থ্য, জীবনের অর্থ, চরিত্র, সম্পর্ক এবং আর্থিক নিরাপত্তা।
আর্থিকভাবে উন্নত দেশগুলোতে জীবনযাত্রার মান ভালো হলেও, জীবনের গভীরতা, পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সামাজিক সহানুভূতির মতো বিষয়গুলোতে তারা পিছিয়ে রয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে জীবনের অর্থ, সম্পর্ক এবং ভালো চরিত্র বজায় রাখা যায়, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলো, যারা ভালো থাকার তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে, তারা অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো ফল করেছে।
গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মানুষের ভালো থাকার কিছু দিক তাদের নিজেদের হাতে, আবার কিছু ক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
ব্যক্তিগত জীবনে ভালো থাকার জন্য কিছু উপায় রয়েছে। যেমন, নিজের ভালো থাকার জন্য ১২টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি করা হয়েছে, যা অনুসরণ করে একজন ব্যক্তি নিজের জীবনকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করতে পারেন।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, উন্নত দেশগুলো ছাড়াও, অন্য অনেক পরিস্থিতিতেও ভালো থাকা সম্ভব।
যারা সামাজিক এবং ধর্মীয় কাজে যুক্ত থাকেন, অথবা যাদের পারিবারিক সম্পর্ক দৃঢ়, তাদের মধ্যে ভালো থাকার প্রবণতা বেশি।
ড. চেং মনে করেন, “যদি একজন ব্যক্তি অসুখী হন, তবে সেটি তার ব্যক্তিগত সমস্যা।
কিন্তু যখন একটি সমাজের মানুষ সুখী নয়, তখন সেটি একটি কাঠামোগত সমস্যা, এবং এর সমাধানে কাঠামোগত পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
ভালো থাকার জন্য কিছু প্রশ্ন এখানে উল্লেখ করা হলো: (এই প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে আপনার ভালো থাকার মাত্রা ০ থেকে ১০ এর মধ্যে মূল্যায়ন করতে পারেন)।
তথ্য সূত্র: সিএনএন