মার্কিন শুল্ক: চীনের ই-কমার্স ব্যবসার কি বিরাট ক্ষতি?

চীনের ই-কমার্স রপ্তানি: শুল্কের কারণে ধাক্কা, ইউরোপের দিকে ঝুঁকছে চীন।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে। মার্কিন শুল্কের কারণে চীন থেকে আসা ই-কমার্স পণ্যের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, বিশেষ করে Temu এবং Shein-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) চীনের অনলাইন ব্যবসার রফতানি বেড়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে চীনের ই-কমার্স পণ্য রপ্তানি ৬৪ শতাংশ কমেছে। তবে একই সময়ে ইউরোপে এই ব্যবসার প্রসার ঘটেছে, যা ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, চীনের ফ্যাশন বিষয়ক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম Shein, শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসার পুনর্গঠন করার কথা ভাবছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে এমন দেশে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে মার্কিন শুল্কের প্রভাব কম। এমন পদক্ষেপ নিলে কোম্পানিটির লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির পরিকল্পনাও স্থগিত হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, ২ মে থেকে তারা ৮০০ ডলার পর্যন্ত মূল্যের পার্সেল আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের সুবিধা বাতিল করবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে, মার্কিন ভোক্তাদের জন্য চীন থেকে অনলাইনে পণ্য কেনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। এর কারণ হলো, ইইউ’র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের কারণে যেমনটা হয়েছিল, অনেকটা সেই রকম পরিস্থিতি তৈরি হবে।

বর্তমানে, চীন থেকে আসা পণ্যের উপর যুক্তরাষ্ট্র ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে Temu এবং Shein-এর মতো প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, খেলনা এবং স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বিষয়ক পণ্যের গড় দাম গত দুই সপ্তাহে ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

একটি গ্রীষ্মের পোশাক, যা Temu-তে ১৮.৪৭ ডলারে (প্রায় ২,০৩০ টাকা) পাওয়া যেত, আমদানি শুল্ক যোগ করার পর তার দাম বেড়ে হয়েছে ৪৪.৬৮ ডলার (প্রায় ৪,৯০০ টাকা)। অর্থাৎ, দাম বেড়েছে ১৪২ শতাংশ। একইভাবে, একটি বাচ্চার সাঁতারের পোশাকের দাম ১২.৪৪ ডলার (প্রায় ১,৩৬০ টাকা) থেকে বেড়ে ৩১.১২ ডলার (প্রায় ৩,৪০০ টাকা) হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, “দুর্বলের কাছে নতি স্বীকার করা তৃষ্ণা মেটানোর জন্য বিষ পান করার মতো।”

মার্কিন শুল্কের মূল উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় উৎপাদন শিল্পকে চাঙ্গা করা। তবে এর ফলে ব্যবসা এবং ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ওয়ালমার্টের মতো কিছু মার্কিন কোম্পানি তাদের চীনা সরবরাহকারীদের জানিয়েছে যে, তারা আমদানি শুল্কের বোঝা বহন করবে, যাতে বাজারে তাদের অবস্থান ধরে রাখা যায়।

এমনকি অ্যামাজনও এই শুল্কের প্রভাব থেকে বাঁচতে পারেনি। শোনা যাচ্ছে, তারা পণ্যের দামের সঙ্গে শুল্কের পরিমাণ আলাদাভাবে দেখানোর পরিকল্পনা করেছিল। তবে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র এই পদক্ষেপকে “শত্রুতামূলক ও রাজনৈতিক” বলে অভিহিত করেছেন। পরে, ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে জেফ বেজোসের সঙ্গে কথা বলেন। এই ঘটনার পর অ্যামাজন জানায়, তারা শুল্কের পরিমাণ দেখানোর বিষয়টি বিবেচনা করেছিল, কিন্তু সেটি অনুমোদিত হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বিশ্ব বাণিজ্যে পরিবর্তন আসবে, যা বাংলাদেশের মতো রপ্তানিকারক দেশগুলোর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলো আমাদের দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মতো রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোর চাহিদা ও মূল্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *