যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অস্থিরতা: বাংলাদেশের জন্য কী প্রভাব?
এপ্রিল মাসটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বেশ অস্থিরতা নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে অস্থিরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক পদক্ষেপের কারণে বাজারের এই টালমাটাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই পরিস্থিতির সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।
শেয়ার বাজারের চিত্র
এপ্রিল মাসের শুরুতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ নীতির ঘোষণার পর এস&পি ৫০০ সূচক ১১ শতাংশের বেশি কমে যায়। যদিও মাস শেষে সূচকটি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে, তবে এখনো ১ শতাংশের মতো পতনের আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারের এই অস্থিরতার মূল কারণ হলো বাণিজ্য নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা। ডাউ জোন্স ইনডাস্ট্রিয়াল এভারেজও এই মাসে প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ পতনের দিকে রয়েছে।
রাজনৈতিক প্রভাব
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই অস্থিরতার পেছনে রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বাজারের পারফরম্যান্স আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় খারাপ ছিল। অন্যদিকে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে বাজারের সূচক বেড়েছে। তবে, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে ব্যবসায়ীরা বেশ উদ্বেগে রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতিবিদ এবং বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, আগামী দিনগুলোতেও এই পরিস্থিতি চলতে পারে। তারা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে বাজারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এই প্রসঙ্গে, সাউন্ড ভিউ ওয়েলথ অ্যাডভাইজার্সের সিনিয়র পার্টনার কেলি বুশিলন বলেন, “শুল্কের অনিশ্চয়তার কারণেই মূলত এমনটা হচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের এই অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিভিন্নভাবে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ। মার্কিন বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে, এই বিষয়গুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আমদানি খরচ বেড়ে যেতে পারে, যা দেশের বাজারে পণ্যের দাম বাড়াতে পারে। আবার, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে, তা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ভবিষ্যতের পূর্বাভাস
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী মাসগুলোতে বাজারের গতিবিধি কেমন হবে, তা নির্ভর করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপর। বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদেরও পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা সাজাতে হতে পারে।
মার্কিন ডলারের দুর্বলতা
ডলারের দুর্বল হয়ে যাওয়াও বাজারের অস্থিরতার একটি কারণ। ইউরো এবং ইয়েনের বিপরীতে ডলারের দরপতন হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের এই দুর্বলতা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
উপসংহার
আন্তর্জাতিক বাজারের এই অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। দেশের নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায়ীদের, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের দিকে নজর রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন