অস্ট্রেলিয়ায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশটির আবাসন সংকট ভোটারদের প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, বাড়িভাড়া ও বাড়ির উচ্চমূল্যের কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশটির সবচেয়ে বড় শহর সিডনিতে একটি বাড়ির গড় দাম আকাশছোঁয়া।
সিডনির বাসিন্দা মেরি (ছদ্মনাম), যিনি দীর্ঘদিন ধরে একটি সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন, তিনি জানান, তার মতো অনেক প্রবীণ নাগরিকের পক্ষে এই উচ্চমূল্যের বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। মেরির ভাষ্যমতে, তিনি এবং তার মেয়ের পক্ষে শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি বাড়ি ভাড়া করা প্রায় অসম্ভব।
বর্তমানে তিনি শহরের বাইরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। মেরির মতো আরও অনেক অস্ট্রেলীয় নাগরিক এই সংকটের কারণে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।
বর্তমানে, সিডনিতে একটি বাড়ির গড় দাম ১৪ লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার (প্রায় ৯ কোটি ১৪ লাখ বাংলাদেশী টাকা)। এই দামে একটি বাড়ি কিনতে হলে একজন বাসিন্দাকে বছরে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার (প্রায় ১ কোটি ৮২ লাখ বাংলাদেশী টাকা) আয় করতে হয়।
যা অনেকের কাছেই দুঃসাধ্য। এমনকি, যারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাদেরও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে, কারণ বাড়িভাড়ার পরিমাণও বাড়ছে দ্রুতগতিতে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচনে আবাসন সংকট একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো, যেমন ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি এবং বিরোধী দল লিবারেল পার্টি-ন্যাশনাল পার্টি জোট, উভয়ই এই সমস্যা সমাধানে কিছু পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে।
লেবার পার্টি নতুন করে ১ লক্ষ বাড়ি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে, লিবারেল পার্টি নির্মাণ খাতে কারিগর তৈরির প্রশিক্ষণ এবং তরুণদের জন্য তাদের পেনশন থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যা সমাধানে দলগুলোর নেওয়া পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট নয়। তারা মনে করেন, আবাসন সংকটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধানে মনোযোগ দিতে হবে।
এর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো, চাহিদার তুলনায় আবাসনের সরবরাহ কম হওয়া। এছাড়া, পুরনো বাড়ি মালিকদের কর সুবিধা দেওয়ার (negative gearing) বিষয়টিও একটি বিতর্কিত বিষয়।
আবাসন সংকটের সমাধানে সরকারের পাশাপাশি নীতি-নির্ধারকদেরও এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ভাড়ার আইনগুলোকে আরও সুসংহত করা দরকার, যাতে ভাড়ার বাজারে বসবাসকারীদের অধিকার সুরক্ষিত হয়।
মোটকথা, অস্ট্রেলিয়ার আবাসন সংকট একটি জটিল সমস্যা এবং এর সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক বিষয় নয়, বরং দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা