উগান্ডায় ক্ষমতার লড়াই: সামরিক আদালতে বিরোধীদের দমন?

**উগান্ডার প্রেসিডেন্ট মুসেভেনির বিরুদ্ধে ভিন্নমত দমনের অভিযোগ, সামরিক আদালতের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক**

উগান্ডায় আগামী বছর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা প্রেসিডেন্ট ইউওয়েরি মুসেভেনির বিরুদ্ধে ভিন্নমতের কণ্ঠরোধ করার উদ্দেশ্যে সামরিক আদালত ব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন।

তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় বিরোধীদের ফাঁসানো হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞ সত্ত্বেও, সরকার সামরিক ট্রাইব্যুনালকে বেসামরিক নাগরিকদের বিচার করার অনুমতি দিতে একটি নতুন আইন প্রণয়নের চেষ্টা করছে।

বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি তার ক্ষমতা ধরে রাখতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করছেন এবং বিচার ব্যবস্থাকে নিজের পক্ষে প্রভাবিত করছেন।

সম্প্রতি বিরোধী নেতা কিজা বেসিজেকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে আটক করে কাম্পালায় নিয়ে আসা হয়।

এরপর সামরিক আদালতে তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অস্ত্র রাখা, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা এবং রাষ্ট্রদ্রোহের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়।

আইনজীবীরা বলছেন, এই অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বেসিজে মুসেভেনির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং চারবারের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সামরিক আদালতে বিচার হওয়া এক হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিকের মধ্যে তিনিও একজন।

জানা গেছে, গত জানুয়ারিতে উগান্ডার সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে সামরিক আদালতে বেসামরিক নাগরিকদের বিচার করা অসাংবিধানিক।

আদালত বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে জড়িত মামলাগুলো সাধারণ আদালতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি এই রায়কে ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ হিসেবে অভিহিত করে সামরিক আদালত ব্যবহারের পক্ষে তার অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেন।

এরপর বেসিজের ১০ দিনের অনশন ধর্মঘটের পরে, কর্তৃপক্ষ তার বিচার বেসামরিক আদালতে স্থানান্তরিত করে।

তবে উগান্ডা ল সোসাইটি জানিয়েছে, সরকার এখনো অন্যদের মামলা স্থানান্তর করেনি।

এদিকে, সরকার সামরিক ট্রাইব্যুনালকে কিছু অপরাধের জন্য বেসামরিক নাগরিকদের বিচার করার অনুমতি দিতে নতুন একটি আইন আনতে চাইছে।

এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশটির আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রী পার্লামেন্টে জানান, মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর খসড়া আইনটি সংসদে উত্থাপন করা হবে।

বিরোধী দল ন্যাশনাল ইউনিটি প্ল্যাটফর্মের একজন রাজনীতিবিদ, মুসেভেনির প্রশাসনকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবহারের অভিযোগ করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মুসেভেনির শাসনের দীর্ঘ সময় ধরে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

তারা বলছেন, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তিনি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন, যার মধ্যে রয়েছে সংবিধান সংশোধন করা।

বিশ্লেষকরা আরও মনে করেন, সরকার ভিন্নমতকে দমন করতে বিচার বিভাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

এর ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

উগান্ডায় ১৯৮৬ সালে মুসেভেনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন।

এরপর তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন।

তবে সমালোচকরা বলছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং মুসেভেনি দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন।

সবকিছু মিলিয়ে, আগামী ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে মুসেভেনির বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগগুলো দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *