কৃষ্ণ বর্ণের পোপ: আফ্রিকার মানুষের মনে কি আশা?

ভ্যাটিকানে নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে, আর সেই দিকেই এখন সারা বিশ্বের ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের নজর।

আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কয়েকজন কার্ডিনালও এই পোপ নির্বাচনের দৌড়ে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ নির্বাচিত হলে, তিনিই হবেন আফ্রিকার প্রথম পোপ।

এই বিষয়ে আফ্রিকার সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

ক্যাথলিক চার্চের ইতিহাসে আফ্রিকার কোনো ব্যক্তির পোপ হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে।

সাধারণত, পোপ নির্বাচনের জন্য কার্ডিনালদের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেওয়া হয়। বর্তমানে, সম্ভাব্য পোপ প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত তিনজন আফ্রিকান কার্ডিনালের নাম শোনা যাচ্ছে।

তাঁরা হলেন গিনি থেকে আসা কার্ডিনাল রবার্ট সারা, ঘানার পিটার টার্কসন এবং কঙ্গোর ফ্রিডোলিন আমবঙ্গো।

যদি এই তিনজনের মধ্যে কেউ নির্বাচিত হন, তবে এটি হবে এক ঐতিহাসিক ঘটনা।

কারণ, ১৫০০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথম কোনো আফ্রিকান ব্যক্তি পোপ হবেন। এই কারণে আফ্রিকার অনেক ক্যাথলিক এই পরিবর্তনের জন্য আগ্রহী, যদিও অনেকের মনে কিছুটা দ্বিধা রয়েছে।

আফ্রিকার ক্যাথলিক চার্চ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে, যা ইউরোপের তুলনায় অনেক বেশি।

বর্তমানে বিশ্বের ক্যাথলিক জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশই আফ্রিকাতে বাস করে। অনেকে মনে করেন, আফ্রিকা বা এশিয়া থেকে কোনো পোপ নির্বাচিত হলে তা অন্তর্ভুক্তির একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে।

তবে, সম্ভাব্য আফ্রিকান পোপ প্রার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও কিছু আলোচনা রয়েছে।

বিশেষ করে, এলজিবিটিকিউ+ অধিকার এবং ঐতিহ্যবাহী ক্যাথলিক রীতিনীতি নিয়ে তাঁদের রক্ষণশীল মনোভাব অনেককে চিন্তিত করে তুলেছে।

উদাহরণস্বরূপ, কার্ডিনাল রবার্ট সারা ঐতিহ্যপূর্ণ প্রার্থনা এবং পুরনো ল্যাটিন মাসের সমর্থক। তিনি পোপ ফ্রান্সিসের উদারনৈতিক নীতির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন।

অন্যদিকে, আফ্রিকার অনেক ক্যাথলিক মনে করেন, পোপের গায়ের রং বা তাঁর জাতিগত পরিচয় মুখ্য নয়, বরং তিনি কতটা ভালো একজন নেতা, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

তাঁরা এমন একজন পোপ চান যিনি সারা বিশ্বের ক্যাথলিকদের একত্রিত করতে পারবেন।

দক্ষিণ সুদানের একটি ক্যাথলিক দাতব্য সংস্থার কর্মকর্তা লুকা লরেন্স এনডেঙ্গে বলেন, “আমাদের কাছে তিনি আফ্রিকান, শ্বেতাঙ্গ নাকি কৃষ্ণাঙ্গ, সেটা কোনো বিষয় নয়।

একজন ভালো ও পবিত্র পোপ যিনি সারা বিশ্বের ক্যাথলিকদের একত্রিত করতে পারবেন, সেটাই আমাদের কাম্য।

ইথিওপিয়ার একটি অঞ্চলের বিশপ টেফেসেলসি মেধিনও মনে করেন, নতুন পোপ যেন পোপ ফ্রান্সিসের মতোই সহানুভূতিশীল হন।

তবে, একজন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান পোপ হওয়ার সম্ভাবনা তাঁকে আনন্দিত করে।

তিনি বলেন, “একজন আবেগপূর্ণ, নিবেদিতপ্রাণ এবং যোগ্য আফ্রিকানকে ক্যাথলিক চার্চের নেতৃত্ব দিতে দেখা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে, উগান্ডার কাম্পালায় ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রধান এমিলি মওয়াঙ্কা মনে করেন, পোপ নির্বাচনের বিষয়ে বেশি জল্পনা করা উচিত নয়।

তাঁর মতে, “পরবর্তী পোপ ‘সবুজ’ হলেও তিনি আমাদের সবার জন্য হবেন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *