টেক্সাসের সীমান্তে অভিবাসীদের জীবনে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রভাব!

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি অঞ্চলে, যেখানে অভিবাসীদের জীবন এখন অনিশ্চয়তার দোলাচলে, সেখানকার গল্প শোনাচ্ছে বার্তা সংস্থা এপি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি কঠোর করার ফলে, সেখানে বসবাসকারী বহু মানুষের জীবন এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

টেক্সাসের ‘প্যানহ্যান্ডেল’ অঞ্চলে, যেখানে বিস্তীর্ণ মাঠ আর গবাদি পশুর খামার, সেখানেই মূলত এই অভিবাসীদের বসবাস। এদের মধ্যে অনেকেই এসেছেন হাইতি থেকে। যেমন কেভেন্সন জ্যাঁ ও তাঁর স্ত্রী শের্লি।

তাঁরা কয়েক বছর আগে হাইতির অস্থিরতা থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, সুন্দর একটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে। কেভেন্সন একজন ট্রাক চালক, আর শের্লি একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে কাজ করেন। তাঁদের জীবন ছিল সাধারণ, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতি তাঁদের সেই স্বপ্নকে কঠিন করে তুলেছে।

এই অঞ্চলে অভিবাসীদের একটি বড় অংশ কাজ করেন মাংস প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে। এই শিল্প, যা দেশের অন্যতম বৃহৎ, মূলত অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির কারণে, বৈধভাবে বসবাসকারী অনেক অভিবাসীর ভিসা বাতিল হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে, যা তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে।

হাইতির নাগরিক নিকোল, যিনি একটি মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় কাজ করেন, তিনি জানান, কিভাবে তাঁর মতো বৈধভাবে বসবাস করা মানুষদেরও এখন দেশ ছাড়ার নোটিশ ধরানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা তো কোনো অপরাধ করিনি। আমরা শুধু ভালোভাবে বাঁচতে চেয়েছি।”

এই অঞ্চলের আরেকজন বাসিন্দা, লেসভিয়া মেনডোজা, যিনি ভেনেজুয়েলা থেকে এসেছেন, তিনিও তাঁর উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, “আমি বুঝি না, কেন আমাদের মতো মানুষ এই নীতির শিকার হচ্ছে।”

প্যানহ্যান্ডেলের একটি ছোট শহর, নাম ক্যাকটাস। সেখানে বিভিন্ন দেশের মানুষের বসবাস, যেমন – সোমালিয়া, কিউবা, কলম্বিয়া ও বার্মা থেকে আসা মানুষজন। এই শহরে একটি মসজিদেও রয়েছে। এখানে, সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান হলো একটি মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা, যেখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন।

এই কারখানায় কাজ করেন হাইতির নাগরিক ইডানো মিন্টর। তিনি জানান, প্রতিদিনের কঠোর পরিশ্রমের জীবন তাঁর। তিনি একা একটি ঘরে থাকেন এবং হাইতিতে থাকা পরিবারের জন্য নিয়মিত টাকা পাঠান। তাঁর একটাই চিন্তা, যদি তাঁর ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হয়ে যায়, তবে কী হবে?

এই অনিশ্চয়তার মধ্যে, কেভেন্সন জ্যাঁ-এর মতো অনেকেই তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। কেভেন্সন বলেন, “আমরা শুধু একটি ভালো জীবনের প্রত্যাশা করি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আমাদের সব চেষ্টাই যেন বৃথা যাচ্ছে।”

এই পরিস্থিতিতে, অভিবাসন নীতি নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়ছে। একদিকে যেমন সরকার অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে চাইছে, তেমনই বৈধভাবে আসা মানুষের জীবনযাত্রাও কঠিন হয়ে পড়ছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *