আতঙ্ক! চীন থেকে পণ্য আসা বন্ধ হলে বাজারে কী ঘটবে?

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে শুল্ক আরোপের কারণে বিশ্বজুড়ে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এর সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মার্কিন বাজারে, যেখানে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং কিছু পণ্যের সংকট দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছে, যার ফলস্বরূপ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে চীনা পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করবে। এই শুল্কের কারণে অনেক মার্কিন ব্যবসায়ী হয়তো চীন থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ করতে বাধ্য হবেন, অথবা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন।

এর ফলে ভোক্তাদের জন্য বাজারে পণ্যের অভাব দেখা দিতে পারে।

লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের নির্বাহী পরিচালক জেন সেরোকা জানিয়েছেন, এই শুল্কের কারণে বন্দরে পণ্য আসার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা এর প্রভাব দেখতে শুরু করব।

গত বছরের তুলনায় লস অ্যাঞ্জেলেসে পণ্য আমদানি ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং কিছু পণ্যের সংকট দেখা দেবে। জে পি মর্গান-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন থেকে আমদানি ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

এর ফলে বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হবে এবং পণ্যের দাম আরও বাড়বে।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অনেক মার্কিন কোম্পানি চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে স্থানান্তরিত করার চেষ্টা করছে। তবে, নতুন সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করতে সময় লাগবে।

ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোনাথন গোল্ড বলেন, ‘নতুন সম্পর্ক স্থাপন করতে মাস এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে।’

অন্যদিকে, চীনেও এর প্রভাব পড়েছে। দেশটির প্রধান বন্দরগুলোতে পণ্য বোঝাই জাহাজগুলো অলসভাবে বসে আছে। অনেক জাহাজ কোম্পানি তাদের জাহাজের ট্রিপ বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছে, কারণ তারা অর্ধেক খালি জাহাজ নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিতে চাইছে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি বেশি দিন চললে গ্রীষ্মকালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দিতে পারে। দোকানগুলোতে পণ্য সরবরাহ কমে গেলে ভোক্তাদের পছন্দের স্বাধীনতাও সীমিত হয়ে আসবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের কারণে দেশটির পরিবহন খাতেও প্রভাব পড়বে। কন্টেইনার পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের কাজ কমে যেতে পারে। আমেরিকান ট্রাকিং অ্যাসোসিয়েশনের মতে, শুল্কের কারণে ট্রাক চালকদেরও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছু প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল একটি দেশ।

বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে, তার প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও পড়তে পারে। তবে, এখনই এর সুনির্দিষ্ট প্রভাব বলা কঠিন। এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *