শিল্পী যখন একে অপরের ছবি আঁকেন: আকর্ষণীয় এক জগৎ!

শিল্পীর চোখে শিল্পী: প্রতিকৃতির এক ভিন্ন জগৎ।

প্রতিকৃতি, শিল্পের এক অতি পরিচিত ধারা। শিল্পী যখন অন্য শিল্পীর প্রতিকৃতি আঁকেন, তখন তা এক বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে।

সেখানে কেবল মডেলের ছবি আঁকা নয়, বরং ফুটে ওঠে পারস্পরিক সম্পর্ক, স্নেহ, শ্রদ্ধা, এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মতো বিষয়গুলোও। সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যের প্যালাট হাউস গ্যালারিতে (Pallant House Gallery) এমনই এক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে এই ধরনের শিল্পকর্মগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

“দৃষ্টি বিনিময়: শিল্পীদের প্রতিকৃতি” (Seeing Each Other: Portraits of Artists) শীর্ষক এই প্রদর্শনীতে ১৯০০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ব্রিটিশ শিল্পীদের একে অপরের প্রতিকৃতি কেমন ছিল, সেই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

এই ধরনের প্রতিকৃতিতে শিল্পীরা একে অপরের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, একজন শিল্পী যখন অন্য শিল্পীর প্রতিকৃতি আঁকেন, তখন সেখানে বন্ধুত্বের সম্পর্ক, ভালোবাসার টান, শ্রদ্ধাবোধ, এমনকি ঈর্ষা বা প্রতিযোগিতার মতো অনুভূতিগুলোও প্রকাশ পায়।

প্যালাট হাউস গ্যালারির প্রধান কিউরেটর মেলানি ভ্যান্ডেনব্রুক বলেন, “এই ধরনের প্রতিকৃতিগুলো শুধু শিল্পী এবং মডেলের মধ্যেকার সম্পর্ককেই দেখায় না, বরং শিল্পকলার জগতে নিজেদের অবস্থান কেমন, সে সম্পর্কেও ধারণা দেয়।”

শিল্পীরা কেন অন্য শিল্পীর প্রতিকৃতি আঁকেন? এর পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে।

শুরুতে, পরিচিতি এবং খরচের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধুদের বা সহকর্মীদের মডেল হিসেবে পাওয়া সহজ এবং খরচও তুলনামূলকভাবে কম হয়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সম্পর্ক গভীরতা লাভ করে। শিল্পী তাঁর জীবনসঙ্গী, প্রিয়জন বা সহশিল্পী—সবার প্রতিকৃতি আঁকেন।

এর মাধ্যমে তাঁদের মধ্যেকার সম্পর্ক, একসঙ্গে পথ চলার স্মৃতিগুলোও প্রকাশিত হয়।

প্রদর্শনীটিতে ওয়াল্টার সিকার্টের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগের সময়ের কাজ থেকে শুরু করে ব্লুমসবেরি গ্রুপ, নিউলিন স্কুল, স্কুল অফ লন্ডন, ১৯৮০-এর দশকে ব্ল্যাক আর্ট গ্রুপ (BLK Art Group), ইয়ং ব্রিটিশ আর্টিস্টস (YBAs) –এর মতো বিভিন্ন শিল্প আন্দোলনের শিল্পীদের কাজ স্থান পেয়েছে।

এখানে মাইকেল অ্যান্ড্রুজের ‘দ্য কলোনি রুম’-এর মতো বিখ্যাত কাজগুলোও রয়েছে, যেখানে শিল্পী তাঁর বন্ধুদের ছবি এঁকেছেন। এছাড়াও, ইশবেল মায়ার্সকাফ ও চান্তাল জফের মতো শিল্পীদের কাজও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তাঁরা ১৯৮৭ সালে গ্লাসগো স্কুল অফ আর্টে (Glasgow School of Art) পরিচিত হন এবং তারপর থেকে একে অপরের প্রতিকৃতি এঁকে আসছেন।

তাঁদের ছবিতে বন্ধুত্বের গভীরতা এবং জীবনের নানা মুহূর্তের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।

লুবাইনা হামিদ-এর “ব্রিজেট রাইলি” (Bridget Riley) নামের একটি কাজও এখানে প্রদর্শিত হয়েছে।

এই কাজে হামিদ, ফ্রিদা কাহলো, বারবারা ক্রুগার, ফেইথ রিঙ্গোল্ড, ক্লডেট জনসন-এর মতো নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পীদের ছবি এঁকে প্রান্তিক গোষ্ঠীর শিল্পকলার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এই প্রদর্শনীতে চিত্রকর্মের পাশাপাশি, ভাস্কর্য, আলোকচিত্র এবং স্থাপনাশিল্পও স্থান পেয়েছে। শিল্পকলার এই ভিন্ন জগৎ দর্শকদের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে।

শিল্পীরা কীভাবে একে অপরের প্রতিচ্ছবি তৈরি করেন, নিজেদের সম্পর্ককে চিত্রিত করেন, এই প্রদর্শনীতে তা গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *