মহাকাশে ইন্টারনেট যুদ্ধ: অ্যামাজন বনাম স্পেসএক্স, কৌতূহল জাগানো লড়াই!

**মহাকাশে ইন্টারনেট যুদ্ধ: অ্যামাজনের কুইপার প্রকল্প ও বাংলাদেশের জন্য এর সম্ভাবনা**

বিশ্বজুড়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে এবার মহাকাশে নিজেদের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক তৈরির দৌড়ে নামল ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন। সম্প্রতি, তারা তাদের ‘প্রজেক্ট কুইপার’-এর অধীনে প্রথম পর্যায়ে বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে।

এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো, বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা। এই দিক থেকে দেখলে, কুইপার সরাসরি ইলন মাস্কের স্পেসএক্স-এর ‘স্টারলিঙ্ক’-এর সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতায় নামতে যাচ্ছে।

ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে একটি ‘আটলাস ফাইভ’ রকেটে চড়ে গত সোমবার (স্থানীয় সময়) আকাশে পাড়ি জমায় কুইপারের প্রথম দিকের স্যাটেলাইটগুলো। অ্যামাজনের পরিকল্পনা হলো, এই প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৩,২০০ স্যাটেলাইটের একটি বিশাল বহর তৈরি করা।

এর মাধ্যমে তারা স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করবে।

বর্তমানে, স্পেসএক্সের স্টারলিঙ্ক বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সরবরাহ করে এবং তাদের গ্রাহক সংখ্যা ইতিমধ্যে ৪৬ লক্ষ ছাড়িয়েছে।

স্টারলিঙ্ক এবং কুইপার উভয়ই পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (লো-আর্থ অরবিট) থাকা স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ইন্টারনেট পরিষেবা দেবে।

এই কক্ষপথগুলি ঐতিহ্যবাহী যোগাযোগ স্যাটেলাইটগুলির তুলনায় পৃথিবীর অনেক কাছে অবস্থিত, ফলে ডেটা আদান-প্রদানের গতি অনেক বেশি হবে।

কিন্তু এই বাজারে প্রবেশ করা অ্যামাজনের জন্য সহজ হবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, বাজারে স্পেসএক্সের একচেটিয়া আধিপত্য ভাঙতে অ্যামাজনকে বেশ বেগ পেতে হবে।

গবেষণা সংস্থা ‘মফেট নাথানসন’-এর একজন শীর্ষ পরিচালক ক্রেইগ মফেট সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “বাজারের উল্লেখযোগ্য অংশ নিজেদের দখলে নিতে কুইপারকে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

সম্ভবত, বিনিয়োগের দিক থেকে দেখলে, এটি খুব একটা লাভজনক নাও হতে পারে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, কুইপার প্রকল্পটি তৈরি করতে প্রায় ১,৭০০ কোটি ডলার খরচ হতে পারে।

এছাড়াও, প্রতি বছর এই প্রকল্পের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ১ থেকে ২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

তবে, অ্যামাজনের এই প্রকল্পে বিনিয়োগের কিছু সুফলও রয়েছে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে অ্যামাজন তাদের ক্লাউড পরিষেবা ‘অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস’-এর ব্যবহারকারী বাড়াতে পারবে এবং তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত বহরকে আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

অন্যদিকে, স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক ইতোমধ্যেই স্টারলিঙ্ক নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়েছেন।

বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পরিষেবা সরবরাহ করা নিয়ে তিনি সমালোচিত হয়েছেন।

সেক্ষেত্রে, অনেকে মনে করেন, জেফ বেজোসের মতো একজন ব্যক্তিত্ব, যিনি অ্যামাজনের প্রধান, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাস্কের থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারেন।

এখন প্রশ্ন হলো, অ্যামাজন কি পারবে স্পেসএক্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে?

তাদের স্যাটেলাইট তৈরি এবং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের গতি কেমন হবে?

তারা কি স্টারলিঙ্কের চেয়ে কম দামে পরিষেবা দিতে পারবে?

যদি এই প্রকল্প সফল হয়, তবে এর সম্ভাব্য প্রভাব বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পড়তে পারে।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে এখনো উন্নত ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছানো যায়নি, সেখানে কুইপারের মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

এছাড়াও, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যখন স্বাভাবিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তখন স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখতে সহায়ক হবে।

অ্যামাজন কর্তৃপক্ষের মতে, এই উৎক্ষেপণ তাদের যাত্রার শুরু মাত্র।

তারা ভবিষ্যতে আরও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।

দেখা যাক, এই মহাকাশ যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কারা জয়ী হয় এবং এর সুফল কিভাবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছায়।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *