অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ট্রাম্পের সোনার দিন?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক সাফল্যের মায়াজাল ভাঙতে শুরু করেছে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক তথ্য বলছে, আমেরিকার অর্থনীতিতে কিছুটা মন্দাভাব দেখা দিয়েছে, যা প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন ০.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। যদিও এই পরিসংখ্যানের গভীরতা এখনই বোঝা যাচ্ছে না, তবে ট্রাম্পের আমলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর এটি একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এর রাজনৈতিক প্রভাব। কারণ, তার প্রধান সমর্থকরা মনে করেন, তিনি একজন দক্ষ ব্যবসায়ী এবং অর্থনীতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারেন। অর্থনীতির এই দুর্বল চিত্র যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভিত্তি দুর্বল করে দিতে পারে।

অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে, যা সাধারণ আমেরিকানদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলছে। ট্রাম্প অবশ্য এর জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দায়ী করছেন। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এই পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী ট্রাম্পের ভুল নীতি এবং অপরিকল্পিত পদক্ষেপ।

অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই “সোনার যুগ” ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক ক্রমশ বাড়ছে। একদিকে যখন তিনি আমেরিকার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার কথা বলছেন, তখন বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে এবং অনেক পরিবারে শিশুদের খেলনা কেনার পরিমাণও কমতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপের কারণে বিনিয়োগকারী এবং ভোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ফলে অনেক আমেরিকান তাদের ৪01(k) অবসরকালীন হিসাব নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন।

সাবেক মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি ল্যারি সামারস সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “অর্থনীতির দিক থেকে ট্রাম্পের শাসনামলে প্রথম একশ দিন সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ ছিল।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, শেয়ার বাজার এবং ডলারের দর পতন হয়েছে, বেকারত্ব বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতিরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই নেতিবাচক মূল্যায়নকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে নেওয়া পদক্ষেপের কারণে এমনটা হয়েছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এই আমদানি বৃদ্ধি আসলে আসন্ন অর্থনৈতিক সমস্যারই ইঙ্গিত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, অর্থনীতির এই সংকট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, একদিকে যেমন তিনি বিশ্বকে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছেন, তেমনই তাঁর সাফল্যের পথ ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *