বিশ্বের বৃহত্তম সৌর টেলিস্কোপ থেকে সূর্যের নজিরবিহীন ছবি: বাংলাদেশের জন্য এর গুরুত্ব
সূর্য, আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র, সবসময়ই মানুষের কাছে এক অপার কৌতূহলের বিষয়। সম্প্রতি, বিশ্বের বৃহত্তম সৌর টেলিস্কোপ ‘ড্যানিয়েল কে. ইনোয়ে সোলার টেলিস্কোপ’ সূর্যের পৃষ্ঠের একটি অসাধারণ ছবি তুলেছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। এই ছবিগুলি সূর্যের জটিল গঠন এবং এর ভেতরের ক্রিয়াগুলি আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
এই আবিষ্কারটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সূর্যের কার্যকলাপ পৃথিবীর প্রযুক্তি এবং জীবনযাত্রার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
এই অত্যাধুনিক টেলিস্কোপটিতে ‘ভিজিবল টিউনেবল ফিল্টার’ (Visible Tunable Filter – VTF) নামক একটি নতুন যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এটি সূর্যের পৃষ্ঠের ছবি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে তুলতে সক্ষম।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সূর্যের পৃষ্ঠে বিশাল আকারের কিছু কালো দাগ, যা ‘সানস্পট’ নামে পরিচিত। এই সানস্পটগুলো হল আসলে সূর্যের শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের কারণে হওয়া অঞ্চল, যেখানে সৌর শিখা (solar flares) এবং ‘করোনাল মাস ইজেকশন’ (coronal mass ejections – CME)-এর মতো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
CME হল সূর্যের বাইরের স্তর থেকে নির্গত হওয়া বিশাল আকারের আয়নিত গ্যাসের মেঘ এবং শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের বিস্তারিত ছবি বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে তারা সৌর আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারবে এবং ভবিষ্যতে সৌরঝড় (solar storm) সম্পর্কে সতর্ক হতে পারবে।
১৮০০ শতকে হওয়া একটি শক্তিশালী সৌরঝড়ের (ক্যারিংটন ঘটনা) কারণে টেলিগ্রাফ স্টেশনে আগুন লেগে গিয়েছিল। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে তা আমাদের আধুনিক প্রযুক্তির উপর, বিশেষ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং স্যাটেলাইট নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
সূর্যের ১১ বছরের একটি চক্র রয়েছে, যেখানে এর চৌম্বকীয় কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায় এবং কমে যায়। এই সময়ে সূর্যের পৃষ্ঠে অনেক বেশি সানস্পট দেখা যায়।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বর্তমানে সূর্য তার কার্যকলাপের সর্বোচ্চ পর্যায়ে (solar maximum) রয়েছে। এই সময়ে ইনোয়ে সোলার টেলিস্কোপ সূর্যের পৃষ্ঠের ছবি তোলার কাজ শুরু করেছে, যা আমাদের সৌরজগতের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলি সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।
এই টেলিস্কোপে ব্যবহৃত VTF যন্ত্রটি সূর্যের বিভিন্ন স্তরের ছবি তোলে। অনেকটা রেডিওর মতো, এটি বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো ব্যবহার করে সূর্যের ভেতরের স্তরগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সূর্যের তাপমাত্রা, চাপ, বেগ এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের গঠন সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এই অত্যাধুনিক যন্ত্রটি তৈরি করতে এক দশকের বেশি সময় লেগেছে। এটি জার্মানির ‘ইনস্টিটিউট ফর সোলার ফিজিক্স’ তৈরি করেছে। এরপর এটিকে আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপের মাউন্টের উপরে অবস্থিত টেলিস্কোপে স্থাপন করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এটি ২০২৬ সাল থেকে সম্পূর্ণভাবে কাজ করতে শুরু করবে।
এই সৌর টেলিস্কোপটি সৌরজগৎ এবং সূর্যের কার্যকলাপ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার জন্য বিজ্ঞানীদের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি সৌরঝড় এবং এর পৃথিবীর উপর প্রভাব সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও গভীর করবে।
এই গবেষণাগুলি সৌরজগতের আরও অনেক রহস্য উন্মোচন করতে সাহায্য করবে, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন