বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘কনক্লেভ’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই আলোচনায়। চলচ্চিত্রটি কিভাবে একজন পোপ নির্বাচিত হন, সেই গোপন প্রক্রিয়াকে তুলে ধরেছে।
সম্প্রতি অস্কারজয়ী এই চলচ্চিত্রটি নিয়ে নানা মহলে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, কারণ এতে ভ্যাটিকানের ভেতরের জটিল রাজনৈতিক চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক রবার্ট হ্যারিসের ২০১৬ সালের থ্রিলার উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে পরিচালক এডওয়ার্ড বার্গার পোপ নির্বাচনের গোপন জগৎকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছেন। ছবিতে অভিনয় করেছেন র্যালফ ফিনেস, স্ট্যানলি টুসিসহ আরও অনেকে।
চলচ্চিত্রে ক্যাথলিক চার্চের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, গোপন আলোচনা এবং ঐতিহ্য-রীতি কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তা-ও দেখানো হয়েছে।
তবে, চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর ক্যাথলিক চার্চের কিছু সদস্য এর সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, ছবিতে চার্চের কর্মকর্তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার লোভকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কেউ কেউ একে পক্ষপাতদুষ্ট বলেও মন্তব্য করেছেন।
বাস্তবে, পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি বেশ গোপনীয়তার সঙ্গে সম্পন্ন হয়। সাধারণত, ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরা এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন।
তারা সবাই একটি গোপন স্থানে মিলিত হন, যেখানে বাইরের কারও প্রবেশাধিকার থাকে না। এমনকি তারা বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকেন।
নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তারা বাইরের কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করতে পারেন না।
নির্বাচনের সময় কার্ডিনালরা সিস্টিন চ্যাপেলে মিলিত হন। তারা ভোটের মাধ্যমে নতুন পোপ নির্বাচন করেন।
ভোট গণনার পর ফলাফল ঘোষণার জন্য সাদা ধোঁয়ার সংকেত ব্যবহার করা হয়, যা নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
চলচ্চিত্রটি তৈরির সময় নির্মাতারা বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। উপন্যাসের লেখক রবার্ট হ্যারিসকে সহায়তা করেছিলেন প্রয়াত কার্ডিনাল করম্যাক মারফি ও’কনর, যিনি ২০০৫ এবং ২০১৩ সালের কনক্লেভে অংশ নিয়েছিলেন।
এমনকি সিনেমার চিত্রনাট্যকার এবং নির্মাতাদের সিস্টিন চ্যাপেল ঘুরে দেখারও সুযোগ হয়েছিল। চলচ্চিত্রে কার্ডিনালদের পোশাক, তাদের আচার-আচরণ এবং গোপনীয়তার সঙ্গে ভোটগ্রহণের দৃশ্যগুলো বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তবে, চলচ্চিত্রটিতে কিছু ত্রুটিও রয়েছে। সমালোচকদের মতে, ছবির শেষাংশে গল্প বলার ধরনে কিছু দুর্বলতা রয়েছে, যা বাস্তবতার থেকে দূরে।
কেউ কেউ ছবির নির্মাণশৈলী এবং অভিনয় দক্ষতার প্রশংসা করলেও, গল্পের মোচড়গুলোকে অস্বাভাবিক ও বিশ্বাসযোগ্যতা থেকে দূরে বলে মনে করেন।
অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন, ‘কনক্লেভ’ আসলে একজন কার্ডিনালের বিশ্বাসের সংকট এবং তা থেকে উত্তরণের গল্প।
তাদের মতে, ছবির প্রধান আকর্ষণ হলো একজন মানুষের আত্মিক পরিবর্তন, যা দর্শকদের গভীরভাবে নাড়া দেয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন