১৯৯০ সালের একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যেখানে একজন মহিলার স্বামী হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। এই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন পামেলা স্মার্ট।
তার স্বামী গ্রেগ স্মার্টকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয় তাকে। এই ঘটনার প্রায় ৩৫ বছর পর, এখনো সেই ঘটনার রেশ রয়ে গেছে। আসুন, সেই ঘটনার বিস্তারিত জানি।
পামেলা স্মার্ট, যিনি এক সময় মিডিয়া কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করতেন, তার স্বামী গ্রেগ স্মার্টের মৃত্যুরহস্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৬ সালে তাদের পরিচয় হয়, এবং ১৯৮৯ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
কিন্তু তাদের দাম্পত্য জীবন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৯০ সালের ১লা মে, নিউ হ্যাম্পশায়ারের একটি অ্যাপার্টমেন্টে গ্রেগ স্মার্টকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তদন্তে জানা যায়, তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
তদন্ত যত এগোতে থাকে, ততই সন্দেহের তীর পামেলার দিকে যেতে থাকে। পুলিশ জানতে পারে, পামেলার সঙ্গে তার স্কুলের এক ছাত্র, উইলিয়াম “বিলি” ফ্লিনের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের জের ধরেই, গ্রেগ স্মার্টের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়।
বিচারের সময় বিলি ফ্লিন স্বীকার করে যে, তিনিই গ্রেগ স্মার্টকে গুলি করেছিলেন। তবে তার দাবি ছিল, পামেলার নির্দেশেই তিনি এই কাজ করেছেন। পামেলা যদিও বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পেছনে তার কোনো হাত ছিল না।
এই ঘটনার জেরে, পামেলা স্মার্টকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এছাড়াও, তাকে প্রথম-ডিগ্রি হত্যার সহযোগী এবং সাক্ষী প্রভাবিত করার মতো অপরাধেও অভিযুক্ত করা হয়। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, প্যারোলের কোনো সুযোগ ছাড়াই।
বিলি ফ্লিন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনকেও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, “প্যারোল” হলো একটি আইনি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কারাবন্দীকে নির্দিষ্ট শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়।
পামেলা স্মার্টের এই মামলাটি ১৯৯০-এর দশকে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই ঘটনা নিয়ে পরবর্তীতে একটি বই লেখা হয়, যা পরে “টু ডাই ফর” নামে সিনেমাতেও রূপ নেয়।
কারাগারে থাকাকালীন সময়ে, পামেলা বেশ কয়েকটি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি একটি ডক্টরেট ডিগ্রি এবং তিনটি মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একজন যাজক হিসেবেও নিযুক্ত হন এবং অন্য কয়েদিদের পড়াতেন।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার মুক্তির জন্য আবেদন করে আসছিলেন, কিন্তু তার আবেদন বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তিনি যদিও তার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু তার কারাদণ্ড এখনো বহাল আছে।
পামেলার এই ঘটনা আমাদের সমাজে অপরাধের গভীরতা এবং এর ভয়াবহতা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। একইসঙ্গে, এটি ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া এবং মিডিয়ার ভূমিকার মতো বিষয়গুলোকেও সামনে নিয়ে আসে।
এই ঘটনার দীর্ঘসূত্রিতা এবং এর সঙ্গে জড়িতদের জীবনের পরিবর্তন, আমাদের সকলের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়।
তথ্য সূত্র: পিপল