মার্কিন শুল্ক: চীনের বাজারে ফিরছে ওয়ালমার্ট ও টার্গেট?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার আঁচ লেগেছে ওয়ালমার্ট ও টার্গেটের মতো বৃহৎ মার্কিন খুচরা বিক্রেতাদের ব্যবসায়। শুল্কের জটিলতার কারণে চীন থেকে পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল তারা।

তবে কয়েক সপ্তাহ বিরতির পর, সম্প্রতি কিছু চীনা সরবরাহকারীর কাছ থেকে পুনরায় পণ্য নেয়া শুরু করেছে এই দুটি প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ওয়ালমার্ট, টার্গেট এবং হোম ডিপোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকের পরই এই সিদ্ধান্ত আসে। বৈঠকে কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছিলেন, শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের দোকানগুলোতে পণ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

এর পরেই মূলত সরবরাহ স্বাভাবিক করার চেষ্টা শুরু হয়।

চীনের দুটি কারখানার বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, ওয়ালমার্ট ও টার্গেটের পক্ষ থেকে তাদের কাছে পুনরায় অর্ডার আসতে শুরু করেছে। এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন কোম্পানি দুটির ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সহায়ক হবে, তেমনি চীনের হাজার হাজার কারখানার কর্মীদের রুটি-রুজির পথও খোলা রাখবে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার চীনের উপর যে অতিরিক্ত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, তার জেরে অনেক মার্কিন কোম্পানি তাদের চীনা সরবরাহকারীদের সঙ্গে চুক্তি স্থগিত করে বা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল। খেলনা প্রস্তুতকারক চীনের আনহুই প্রদেশের ভিভি টং জানিয়েছেন, ওয়ালমার্ট গত সপ্তাহে তাদের কাছ থেকে পুনরায় অর্ডার দিয়েছে।

ভিভি টং আরও জানান, সাধারণত মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত খেলনা তৈরির ভরা মৌসুম থাকে। ক্রিসমাস সহ বিভিন্ন উৎসবের আগে এই সময়ে খেলনার চাহিদা বাড়ে। কিন্তু শুল্কের কারণে তারা কিছুটা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

অন্যদিকে, চীনের জিয়াংসু প্রদেশের একটি কারখানার মালিক অ্যালেন ইয়ান জানিয়েছেন, টার্গেটের পক্ষ থেকে তাদের কাছে পণ্য পাঠানোর জন্য সোমবার বার্তা এসেছে। তবে, তাদের অন্যান্য ক্লায়েন্ট, যেমন – কস্টকো ও স্যামস ক্লাবের সঙ্গে ব্যবসা এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে, সরবরাহকারীরা এখনো বেশ সতর্ক রয়েছেন। অনেক সরবরাহকারী তাদের পণ্যের দামে ছাড় দিতে রাজি হয়েছেন।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা রপ্তানিকারকদের আর্থিক ও নীতিগত সহায়তা দেবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রবেশ এবং অন্যান্য বাজারে ব্যবসার সুযোগ তৈরিতেও সহায়তা করা হবে।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে বলেছে, শুল্ক নীতি তাদের কোম্পানির পণ্য মূল্য এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, এই ভুল নীতি সংশোধন করে চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য কিছু সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। চীন থেকে অনেক বিদেশি ক্রেতা তাদের ক্রয়াদেশ অন্য দেশে সরিয়ে নিতে পারে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাজার প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *