**মার্কিন বাজারে অস্থিরতা: ট্রাম্পের মন্তব্যে ডলারের পতন, উদ্বেগে বিশ্ব অর্থনীতি**
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে সোমবার বড় ধরনের দরপতন দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে নিয়ে করা মন্তব্যের জের ধরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি, বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তাও বাজারের এই প্রতিক্রিয়ার অন্যতম কারণ।
সোমবার দিনভর দরপতনের পর, দিনের শেষে ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক প্রায় ৯৭২ পয়েন্ট বা ২.৪৮ শতাংশ কমে যায়। এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক কমেছে ২.৩৬ শতাংশ, এবং প্রযুক্তি খাতের সূচক নাসডাক কম্পোজিট-এর পতন হয়েছে ২.৫৫ শতাংশ। এই তিনটি প্রধান সূচকই গত কয়েকদিনের মন্দাভাব থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছিল, এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে চলতি মাসটি তাদের জন্য ২০২২ সালের পর সবচেয়ে খারাপ হতে পারে।
মার্কিন ডলার সূচক, যা অন্যান্য প্রধান ৬টি মুদ্রার বিপরীতে ডলারের অবস্থান নির্দেশ করে, এক শতাংশের বেশি কমে গেছে। এর ফলে ডলার গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। বিনিয়োগকারীরা এখন নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ডলারের বদলে সোনা এবং বন্ডের দিকে ঝুঁকছেন।
ওয়াল স্ট্রিট ইতোমধ্যে বেশ উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে, কারণ ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার পাওয়েলের তীব্র সমালোচনা করেন এবং সামাজিক মাধ্যমে তাকে দ্রুত অপসারণের ইঙ্গিত দেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, পাওয়েল সুদের হার কমাচ্ছেন না। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন বেঞ্চমার্ক সুদের হার কমিয়েছে, তখন ট্রাম্পের এই মন্তব্য আসে। পাওয়েল অবশ্য ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপ বাজারের স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করতে পারে। তারা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল বয়ে আনবে না।
এদিকে, ফেডারেল রিজার্ভের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা শুল্কের প্রভাব মূল্যায়ন করতে “অপেক্ষারত” অবস্থানে রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে এই অস্থিরতা বাণিজ্য চুক্তি এবং সুদের হার কমানোর বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
মার্কিন-জাপান বাণিজ্য আলোচনা সফল না হওয়ায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুল্ক নিয়ে আলোচনা সম্ভবত আরও কয়েক মাস চলতে পারে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন এবং বাজারের এই পরিস্থিতিতে ডলারের বিনিময় হার আরও কমতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীরা এখন নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। সোমবার সোনার দাম ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে এবং প্রতি আউন্স ৩,৪০০ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। সোনার এই ঊর্ধ্বগতি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের এই অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতির উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, ডলারের দর পতনের কারণে আমদানি খরচ বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। একই সঙ্গে, বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে, প্রবাসী আয় কমে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বৈঠকে বসবেন এবং সুদের হার নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফেড সম্ভবত সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন