বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। উন্নত দেশগুলোতেও মন্দা এবং আর্থিক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ।
এমন পরিস্থিতিতে, নিজের আর্থিক সুরক্ষার জন্য সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কিভাবে আমরা আমাদের অর্থকে সুরক্ষিত রাখতে পারি এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি, সেই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নিচে আলোচনা করা হলো।
প্রথমেই আসা যাক, একটি জরুরি পরিকল্পনা তৈরির বিষয়ে। অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।
চাকরি হারানোর মতো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য, আমাদের একটি পরিকল্পনা থাকা দরকার। আপনার আয়ের উৎসগুলো বিবেচনা করুন।
যদি চাকরি চলে যায়, তাহলে কি আপনি ক্ষতিপূরণ এবং বেকার ভাতা পাবেন? আপনার কোম্পানির নিয়মাবলী এবং আপনার রাজ্যের শ্রম বিভাগের ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এছাড়া, এমন কোনো দক্ষতা বা ব্যবসা আছে যা আপনি চাকরি হারানোর সময় ব্যবহার করতে পারেন? যেমন, অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং বা ছোট ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে।
আর্থিক সুরক্ষার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জরুরি অবস্থার জন্য কিছু নগদ অর্থ প্রস্তুত রাখা। সাধারণত, একক ব্যক্তির জন্য তিন থেকে ছয় মাসের এবং পরিবারের প্রধান উপার্জনকারীর জন্য নয় থেকে বারো মাসের জীবনযাত্রার খরচ মেটানোর মতো সঞ্চয় রাখা উচিত।
যদি এত পরিমাণ অর্থ এখনই সঞ্চয় করা সম্ভব না হয়, তাহলে ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ বা ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, আপনার বর্তমান খরচের হিসাব রাখা দরকার।
প্রয়োজনীয় খরচ এবং অপ্রয়োজনীয় খরচের মধ্যে পার্থক্য করে, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর পরিকল্পনা করতে পারেন।
শেয়ার বাজারে অস্থিরতা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু, দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে, এই অস্থিরতা থেকে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যেতে পারে।
আপনার পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করা উচিত। শুধু শেয়ারে বিনিয়োগ না করে, বন্ড এবং অন্যান্য স্থিতিশীল খাতেও বিনিয়োগ করতে পারেন। এতে ঝুঁকি কম হয়।
যদি আপনার হাতে ২০ বছরের বেশি সময় থাকে, তাহলে বাজারের পতনকে সুযোগ হিসেবে দেখতে পারেন। শেয়ারের দাম কমে গেলে, সেই সময়ে বিনিয়োগ করা লাভজনক হতে পারে।
স্বল্পমেয়াদে, অর্থাৎ পাঁচ বছরের কম সময়ের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য, সরকারি বন্ড, স্বল্পমেয়াদী সঞ্চয় প্রকল্প অথবা ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগ করতে পারেন।
অবসর গ্রহণের কাছাকাছি সময়ে বা অবসর গ্রহণের পর, আপনার জীবনযাত্রার এক থেকে দুই বছরের খরচ মেটানোর মতো অর্থ সুরক্ষিত রাখতে হবে। এই ক্ষেত্রে, উচ্চ সুদের হারে সঞ্চয়ী হিসাব অথবা স্বল্পমেয়াদী বন্ডের মতো নগদ-সমতুল্য সম্পদ ব্যবহার করা যেতে পারে।
আর্থিক সুরক্ষার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাজারের খারাপ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে সব বিনিয়োগ তুলে নেওয়া উচিত নয়। এতে আপনি লোকসানের শিকার হবেন এবং আপনার বিনিয়োগের বৃদ্ধিও ব্যাহত হবে।
বাজারের উত্থান-পতনের সুযোগ বুঝে, বিনিয়োগ ধরে রাখতে হবে।
বৈদেশিক বাজারে বিনিয়োগও একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। বর্তমানে, অনেক দেশের শেয়ার বাজার ভালো ফল দেখাচ্ছে।
আপনি যদি কোনো টার্গেট ডেট ফান্ডে বিনিয়োগ করেন, তাহলে সম্ভবত আপনার পোর্টফোলিওতে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের অংশ রয়েছে। এছাড়াও, আপনার পোর্টফোলিওর একটি অংশ, আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন।
আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে, সচেতনতা এবং সঠিক পরিকল্পনা অপরিহার্য। এই পরামর্শগুলো অনুসরণ করে, আপনি আপনার আর্থিক ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: CNN