ঘরের সাধারণ প্লাস্টিক সামগ্রীতে থাকা রাসায়নিক হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, গবেষণায় উদ্বেগ।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রীতে পাওয়া যাওয়া কিছু রাসায়নিক উপাদান (যেমন –ফথ্যালেটস) হৃদরোগের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে। গবেষণা বলছে, বিশেষ করে ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অন্যতম কারণ এই ফথ্যালেটস।
গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ২০১৮ সালেই ফথ্যালেটসের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩ লক্ষ ৫৬ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই সংখ্যাটি সত্যিই উদ্বেগের কারণ।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গ্রসম্যান স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক ড. লিওনার্দো ট্রাসান্ডে এর মতে, “ফথ্যালেটস হৃদপিণ্ডের ধমনীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর ফলে হৃদরোগ দ্রুত বাড়তে পারে এবং অনেক সময় মানুষ মারাও যেতে পারে।”
ফথ্যালেটস আসলে কী? এগুলো হলো সিনথেটিক বা কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ, যা প্লাস্টিককে আরও নমনীয় করতে এবং সহজে ভাঙতে না পারে সেজন্য ব্যবহার করা হয়। এই রাসায়নিক উপাদান খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত পাত্র, শ্যাম্পু, মেকআপ, পারফিউম, খেলনা, পাইপ, মেঝে এবং আরও অনেক পণ্যে পাওয়া যায়। এমনকি খাদ্য সামগ্রীর মোড়কেও এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, ফথ্যালেটসের প্রভাবে শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা পুরুষদের হৃদরোগের অন্যতম কারণ। আগে করা কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ফথ্যালেটস প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, শিশুদের মধ্যে শারীরিক ত্রুটি সৃষ্টি করে এবং অ্যাজমা, শিশুদের অতিরিক্ত ওজন ও ক্যান্সারের মতো রোগেও এর প্রভাব রয়েছে।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ফথ্যালেটসের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের প্রায় ৩০ শতাংশ ছিল আফ্রিকার মানুষ এবং ২৫ শতাংশ ছিল পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফথ্যালেটসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো উচিত। খাবার গরম করার জন্য প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করা উচিত নয় এবং সুগন্ধিযুক্ত লোশন ও ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা এড়িয়ে যাওয়া ভালো। এছাড়াও, খাবার সংরক্ষণে কাঁচ, স্টেইনলেস স্টিল, সিরামিক বা কাঠের পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। তাজা ফল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস করা এবং ঘন ঘন হাত ধোয়ার মাধ্যমেও এই রাসায়নিকের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা যেতে পারে।
এই গবেষণা ফথ্যালেটসের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং আমাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে উৎসাহিত করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন