শিরোনাম: আফ্রিকার এইচআইভি গবেষণা: মার্কিন সাহায্য বন্ধের ফল, বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা
আফ্রিকা মহাদেশে এইচআইভি (HIV) নির্মূলের লড়াইয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার ফলে সেখানকার গবেষণা কার্যক্রম এবং চিকিৎসার অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি (USAID) এবং প্রেসিডেন্টস এমার্জেন্সি প্ল্যান ফর এইডস রিলিফ (PEPFAR)-এর তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এইচআইভি প্রতিরোধের কর্মসূচিগুলো ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। এর ফলে অনেক গবেষণা প্রকল্প স্থগিত হয়ে গেছে, এইডস রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ঔষধের সরবরাহ কমে গেছে এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা চাকরি হারাতে শুরু করেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক। দেশটিতে বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক এইচআইভি রোগী রয়েছে। সেখানকার বিজ্ঞানীরা একটি কার্যকরী টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু মার্কিন সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের গবেষণা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ড. প্যাট্রিক আরবাথনট-এর নেতৃত্বে একটি গবেষণা দল এইচআইভি প্রতিরোধের টিকা তৈরির জন্য কাজ করছিল। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে তাদের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
এই ঘটনার প্রভাব শুধু গবেষণা কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এইডস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এইডস প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ এবং কনডমের সরবরাহও ব্যাহত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা। তাদের মতে, স্বাস্থ্যখাতে বিদেশি সাহায্যের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা আত্মনির্ভরশীলতার পথে একটি বড় বাধা। আফ্রিকার দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব স্বাস্থ্যখাতে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে হবে।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই ধরনের সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। এর ফলে কেবল আফ্রিকার মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিঘ্নিত হবে না, বরং বিশ্বব্যাপী এইডস নির্মূলের যে লক্ষ্য, তা অর্জনেও বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে দেখা যায়, আমাদের দেশেও স্বাস্থ্যখাতে বিদেশি সাহায্যের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তাই, আফ্রিকার এই ঘটনা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। আমাদের স্বাস্থ্যখাতে নিজস্ব অর্থায়নের পরিমাণ বাড়াতে হবে, গবেষণা ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
এইচআইভি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে, সরকার, সুশীল সমাজ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। একইসঙ্গে, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এইডস সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করা অপরিহার্য।
আফ্রিকার এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে, বাংলাদেশ তার স্বাস্থ্যখাতকে আরো শক্তিশালী করতে পারে এবং একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে অবদান রাখতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা