ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ: ধ্বংসের পথে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি? আইএমএফের সতর্কবার্তা!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ, সতর্কবার্তা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে এবং এর গুরুতর প্রভাব পড়বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমৃদ্ধির ওপর।

মঙ্গলবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াতে পারে, যেখানে গত বছর এই হার ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এমনকি, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বাড়তে পারে, যা ২০২৪ সালের ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির চেয়েও কম।

আইএমএফের পূর্বাভাসে এই মন্দা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার আগে গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির হার আরও বেশি ছিল। ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাটি বলছে, বাণিজ্য যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে চরম অনিশ্চয়তা বিশ্ব অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

তাদের মতে, বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিগুলো এখন ‘নিম্নমুখী’। আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে-অলিভিয়ের গোরিঞ্চাস এক ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার কারণে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা হয়েছে।

নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে, শুল্ক ঘোষণার আগেই যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা কমে গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, শুল্ক বহাল থাকলে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সব অঞ্চলের জন্য নেতিবাচক হবে।

এদিকে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা রক্ষার ওপরও জোর দিয়েছেন গোরিঞ্চাস। সম্প্রতি, ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলকে ‘বড় ক্ষতিগ্রস্থ’ হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর সমালোচনা করেন এবং সুদের হার কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।

অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে সুদের হার কমালে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। কারণ, বর্তমানেও মূল্যস্ফীতি ফেডারেল রিজার্ভের ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রয়েছে এবং ট্রাম্পের শুল্কের কারণে এটি আরও বাড়তে পারে।

আইএমএফের ধারণা, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা জানুয়ারির পূর্বাভাসের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএমএফ এই ‘বিশেষ’ পরিস্থিতিতে সর্বশেষ ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি’ তৈরি করেছে।

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর তাদের পূর্বাভাস পরিবর্তন করতে হয়েছে। গোরিঞ্চাস সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘আমরা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছি, যেখানে গত ৮০ বছর ধরে বিদ্যমান বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নতুন করে সাজানো হচ্ছে।’

প্রতিবেদনে বাণিজ্যনীতির গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়, বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং নীতিগত অনিশ্চয়তা বাড়লে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও কমতে পারে। অন্যদিকে, শুল্ক হ্রাস এবং বাণিজ্য নীতিতে স্থিতিশীলতা আনলে পরিস্থিতি উন্নত হতে পারে।

ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন ল্যাগার্দে এক সাক্ষাৎকারে বাণিজ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘মুক্ত বাণিজ্য সবসময় সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে এবং সকল অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’

ল্যাগার্দে আরও জানান, উচ্চ শুল্ক ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যদিও তিনি ইউরো ব্যবহারকারী ২০টি দেশে মন্দা দেখা দেবে বলে মনে করেন না।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *