শিরোনাম: জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে উৎসাহ দিতে ‘বেবি বোনাস’: কতটা কার্যকর হবে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাব?
যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন বাবা-মায়েদের জন্য ৫,০০০ ডলার “বেবি বোনাস” প্রদানের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। যদিও দেশটির ফার্টিলিটি রেট বা সন্তান জন্মহার বর্তমানে রেকর্ড পরিমাণ কমে এসেছে।
এই পরিস্থিতিতে এমন একটি পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে ভিন্নমত।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই প্রস্তাবের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। এই বোনাস প্রদানের ধারণাটি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সন্তান ধারণের ধারণা ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছে।
কর্মসংস্থান এবং ভবিষ্যতের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত কর্মী প্রয়োজন, এমন প্রেক্ষাপটে জন্মহারের নিম্নমুখী প্রবণতা একটি উদ্বেগের কারণ।
তবে, এই ধরনের পদক্ষেপের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র আর্থিক প্রণোদনা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক নাও হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের জন্য কর ছাড়ের মতো বিভিন্ন প্রণোদনা কর্মসূচি চালু করা হলেও, তা প্রত্যাশিত ফল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি, কোভিড-১৯ ত্রাণ বিলের অধীনে শিশুদের জন্য দেওয়া আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর শিশুদের দারিদ্র্যের হার বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার কমানোর পেছনে গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ বিদ্যমান। নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতা তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছে।
ফলে, চাইলেই এই প্রবণতা সহজে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হাঙ্গেরি সরকার নববিবাহিত দম্পতিদের জন্য প্রায় ৩০,০০০ ডলারের সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করে, যা তিনটি সন্তানের জন্ম দিলে পরিশোধ করতে হয় না।
হংকং-এ প্রতি সন্তানের জন্য ২,৫০০ ডলার এবং জার্মানির মতো দেশে শিশুদের জন্য মাসিক ভাতা (Kindergeld) এবং নতুন বাবা-মায়েদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করা হয়।
তবে, জনসংখ্যার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জনপ্রতি ২.১ জন সন্তান জন্ম নেওয়া প্রয়োজন। সেই তুলনায়, যুক্তরাষ্ট্রের ফার্টিলিটি রেট ১.৬ এবং জার্মানির ক্ষেত্রে এটি ১.৪।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশে পরিবার পরিকল্পনা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
তবে, উন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ এবং তাদের পদক্ষেপগুলো আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তাবিত এই “বেবি বোনাস” ধারণাটি জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমেই জন্মহারের ওপর ইতিবাচক প্রভাব আনা সম্ভব।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।