হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্বেষ: ইহুদি ও মুসলিম শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের চিত্র
যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি পৃথক প্রতিবেদনে শিক্ষাঙ্গনে ইহুদি-বিদ্বেষ ও মুসলিম-বিরোধী মনোভাবের চিত্র ফুটে উঠেছে। এই দুটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হওয়া ভীতি, একাকিত্ব এবং একাডেমিক অঙ্গনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের মতো বিষয়গুলো।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতিতে দুঃখ প্রকাশ করে প্রতিকারের আশ্বাস দিয়েছে।
প্রতিবেদনগুলোতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার পর পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে। অনেক শিক্ষার্থী, বিশেষ করে ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরা, নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ ক্যাম্পাসে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে আবার ক্লাসরুমে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের মতামত প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনেক মুসলিম শিক্ষার্থী মনে করেন, তাদের একাডেমিক বা পেশাগত জীবনে তাদের মত প্রকাশের কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে, ইহুদি শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অনেকে তাদের মতামত প্রকাশ করতে অস্বস্তি বোধ করেন।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে, সে বিষয়ে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
এই দুটি প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আসা আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রেও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে অ্যান্টিসেমিটিজম বা ইহুদি-বিদ্বেষের অভিযোগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের তহবিল স্থগিত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার জানিয়েছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ বরং বিদ্বেষ দূরীকরণে সহায়ক হবে না।
তিনি মনে করেন, এর ফলে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করা হচ্ছে, যার ফলে তারা নানা ধরনের হুমকি ও ভয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি পরিবর্তনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার পরিবেশ তৈরি করতে চায়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে, সবার জন্য একটি নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন তৈরি করতে হলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনা ও মত বিনিময়ের সুযোগ বাড়ানো দরকার।
তথ্য সূত্র: সিএনএন