মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গভীর সমুদ্র খনন সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো সমুদ্রের গভীরে মূল্যবান খনিজ পদার্থ উত্তোলনের প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করা।
বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত এই আদেশটি দেশটির অভ্যন্তরীণ ও বাণিজ্য বিষয়ক সচিবদের নির্দেশ দেয়, যাতে তারা দ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় গভীর সমুদ্র খননের অনুমতি এবং অনুসন্ধানের কাজ শুরু করতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, তাদের জলসীমায় প্রায় ১ বিলিয়ন মেট্রিক টনেরও বেশি পরিমাণে বিভিন্ন খনিজ পদার্থের ভাণ্ডার রয়েছে। এর মধ্যে তামা, কোবাল্ট, নিকেল, দস্তা এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান উল্লেখযোগ্য।
এই উপাদানগুলো কম্পিউটার চিপ, ব্যাটারি ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি তৈরিতে অপরিহার্য।
বর্তমানে, এই খনিজ পদার্থের সরবরাহ শৃঙ্খলে চীনের একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে। এই কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও তাদের মজুদ খুঁজে বের করতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, চীন তাদের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি উৎসের উপর নির্ভরশীল ছিলাম। আজকের এই ঐতিহাসিক ঘোষণা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও যোগ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন চায় “যুক্তরাষ্ট্র যেন এই সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে চীনের থেকে এগিয়ে থাকে।
তবে, গভীর সমুদ্র খনন শিল্প রাতারাতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। কারণ, বিশ্বে এখনো পর্যন্ত কোনো বাণিজ্যিক গভীর সমুদ্র খনন কার্যক্রম শুরু হয়নি।
ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশ বাণিজ্য সচিবকে অনুসন্ধানের অনুমতি এবং বাণিজ্যিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া দ্রুত করার নির্দেশ দিয়েছে। একইসাথে, অভ্যন্তরীণ সচিবকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের মহাদেশীয় শেল্ফে খনন সংক্রান্ত অনুমতি পর্যালোচনা ও লাইসেন্স প্রদানের একটি প্রক্রিয়া তৈরি করতে বলা হয়েছে।
গভীর সমুদ্রের মূল্যবান ভাণ্ডার উত্তোলনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন কোম্পানি ও কিছু দেশের আগ্রহ রয়েছে। এই আদেশের ফলে কোম্পানিগুলো জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে থাকা ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটির (আইএসএ) অনুমোদন এড়িয়ে যেতে পারবে।
আইএসএ একটি খনিজ উত্তোলন বিষয়ক বিধি তৈরি করার চেষ্টা করছে, কিন্তু এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে মতবিরোধের কারণে তা এখনো চূড়ান্ত রূপ পায়নি।
কানাডা ভিত্তিক একটি গভীর সমুদ্র খনন কোম্পানি, ‘দ্য মেটালস কোম্পানি’, মার্চ মাসের শেষে ঘোষণা করেছে যে তারা আইএসএ-র মাধ্যমে না গিয়ে সরাসরি মার্কিন খনন বিধি অনুযায়ী অনুমোদনের জন্য আবেদন করবে।
তবে, বিজ্ঞানীরা গভীর সমুদ্র খনন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে অজানা বাস্তুতন্ত্র গভীর সমুদ্রে খনন করলে সামুদ্রিক জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।
অনেক দেশ গভীর সমুদ্র খনন বন্ধ অথবা সীমিত করার আহ্বান জানিয়েছে, যতক্ষণ না এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
অন্যদিকে, গভীর সমুদ্র খনন কোম্পানিগুলো বলছে, উদ্বেগের কারণগুলো অতিরঞ্জিত। তাদের মতে, সমুদ্র থেকে খনিজ উত্তোলন ভূমিভিত্তিক খনির চেয়ে বেশি টেকসই, যেখানে পরিবেশগত এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত সমস্যাগুলো বিদ্যমান।
তথ্য সূত্র: সিএনএন