আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার শ্রমিকদের অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে একটি নতুন জোট। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শ্রমিকদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।
গরমের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায়, বিশেষ করে শহরগুলোতে, রাস্তার পাশে ব্যবসা করা মানুষজন তাদের আয় হারাচ্ছে। তাদের এই ক্ষতির জন্য তেল, গ্যাস এবং কয়লা কোম্পানিগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে দাবি উঠেছে।
দিল্লিতে সম্প্রতি “জলবায়ু সুবিচারের জন্য শ্রমিক জোট – দক্ষিণ এশিয়া” নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়েছে। এই জোটে শ্রমিক সংগঠন, জলবায়ু বিষয়ক কর্মী এবং পরিবেশকর্মীরা একত্রিত হয়েছেন।
তারা “দূষণকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে” এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, যা ধনী এবং দূষণকারী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করবে।
এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন কর আরোপ করে, সেই অর্থ দিয়ে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর পুনর্গঠন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়ক পদক্ষেপ নেওয়া।
দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিক সমাজ, বিশেষ করে যারা দিন আনে দিন খায়, তারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখানকার শ্রমিকদের প্রায় ৮০ শতাংশই হয় দিনমজুর, নয়তো ছোটখাটো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন তাদের কাজ করার ক্ষমতা ও জীবন ধারণের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের দিল্লিতে গরমের কারণে রাস্তার ব্যবসায়ীদের আয় ৫০ শতাংশের বেশি কমে গেছে।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শ্রমিকদের কথা সেভাবে শোনা হয় না। যেখানে মাত্র পাঁচটি তেল কোম্পানি ২০২১ সালে ১০২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে, সেখানে শ্রমিকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
অতীতে, শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায় করেছে। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীবন ও কাজের ধরন বদলে যাচ্ছে।
২০৫০ সাল নাগাদ, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৮০ কোটির বেশি মানুষ এমন অঞ্চলে বসবাস করবে, যেখানে চরম আবহাওয়ার কারণে জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়বে।
শ্রমিকরা এখন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আবার একত্রিত হচ্ছেন। বিভিন্ন পেশা, জাতি, ধর্ম ও লিঙ্গের শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে শোষণ ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে।
তারা অতীতের শ্রমিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার মানুষ, যেমন জেলে এবং বর্জ্য সংগ্রাহকরা, তাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে।
কিন্তু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের কথা সেভাবে শোনা হয় না।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। ২০৭০ সাল নাগাদ এই ক্ষতির পরিমাণ ৯৯৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে পর্যাপ্ত অর্থ সহায়তা করা হয়নি।
ধনী দেশগুলো এবং দূষণকারীরা নতুন তেল ও গ্যাস উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
শ্রমিকদের জন্য এখন জরুরি ভিত্তিতে আশ্রয় এবং কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার।
শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য একত্রিত হয়েছেন এবং তারা একটি ন্যায়সংগত ও টেকসই ভবিষ্যৎ চাইছে। শ্রমিকদের এই আন্দোলনে তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা সহজ হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা