ভ্যানিলা ফ্লেভার: আসল রহস্য কি? বেভারেদের গোপন কোনো উপাদান?
আমাদের দেশে মিষ্টি, কেক কিংবা আইসক্রিমের জগতে ভ্যানিলার সুবাস খুবই পরিচিত। অনেকের ধারণা, এই ভ্যানিলার স্বাদ আসে বুঝি কোনো বিশেষ প্রাণী থেকে।
ইন্টারনেটে মাঝেমধ্যে এমন কিছু খবর দেখা যায় যেখানে বলা হয়, বেভার নামক এক ধরনের প্রাণীর শরীর থেকে নিঃসৃত হওয়া এক প্রকার তরল পদার্থ, যার নাম ক্যাসটোরিয়াম, সেটিই নাকি ভ্যানিলা ফ্লেভারের মূল উৎস। এই ধারণার সত্যতা কতটুকু?
আসলে, খাদ্য বিজ্ঞানীদের মতে, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। বাজারে উপলব্ধ ভ্যানিলা ফ্লেভারের সিংহভাগ আসে ভ্যানিলা অর্কিড নামক এক প্রকার ফুলের নির্যাস থেকে।
২০১৯ সালে বিশ্বে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ পাউন্ড ভ্যানিলা নির্যাস উৎপাদিত হয়েছিল।
তবে, ক্যাসটোরিয়ামের একটা ভিন্ন ইতিহাস রয়েছে। অতীতে, মানুষ ক্যাসটোরিয়ামকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করত। জ্বর, পেটের সমস্যা, এমনকি মানসিক রোগের চিকিৎসায়ও এর ব্যবহার ছিল।
প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিসও খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দে ক্যাসটোরিয়ামের রোগ নিরাময় ক্ষমতা নিয়ে লিখেছিলেন। ক্যাসটোরিয়ামের রাসায়নিক গঠন এটিকে ঔষধি গুণ এনে দেয়।
এতে রয়েছে স্যালিসিলিক অ্যাসিড, যা ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও, এতে ভ্যানিলার স্বাদ সৃষ্টিকারী উপাদান ভ্যানিলিনের মতো কিছু উপাদানও পাওয়া যায়।
তাহলে ক্যাসটোরিয়াম জিনিসটা আসলে কী? বেভার এক প্রকার জলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের ক্যাসটোর স্যাক নামক গ্রন্থি থেকে ক্যাসটোরিয়াম নিঃসৃত হয়।
এই ক্যাসটোরিয়াম তাদের এলাকা চিহ্নিত করতে এবং সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে সাহায্য করে। মজার বিষয় হলো, স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েরই এই গ্রন্থি থাকে।
তবে, খাদ্য হিসেবে ক্যাসটোরিয়ামের ব্যবহার খুবই সীমিত। আমেরিকাতে বছরে ২৯২ পাউন্ডেরও কম ক্যাসটোরিয়াম ব্যবহৃত হয়।
এটি মূলত কিছু বিশেষ সুগন্ধি এবং খাদ্যদ্রব্যে সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) ক্যাসটোরিয়ামকে খাদ্য ব্যবহারের জন্য নিরাপদ ঘোষণা করেছে। তবে, বাজারে উপলব্ধ ভ্যানিলা ফ্লেভারের প্রধান উৎস অবশ্যই ভ্যানিলা অর্কিড।
তাই, আপনার প্রিয় ভ্যানিলা ফ্লেভারযুক্ত খাবার উপভোগ করতে পারেন, কারণ এর উৎস বেভার নয়!
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক