১০ সেকেন্ড! এক পায়ে দাঁড়ালে কি বোঝা যায়?

আমাদের সুস্থ জীবনের জন্য শরীরের ভারসাম্য রক্ষার গুরুত্ব অপরিহার্য। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের এই ক্ষমতা কমে যেতে পারে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে কঠিন করে তোলে।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং বয়স সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেয়।

একটি সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, এক পায়ে ১০ সেকেন্ডের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে পারা একজন ব্যক্তির শরীরের বয়সের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিকের গবেষণা বলছে, শরীরের ভারসাম্য, পেশী শক্তি বা হাঁটাচলার ধরনের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

শরীরের ভারসাম্য আমাদের স্নায়ু এবং অন্যান্য শারীরিক অবস্থার সম্পর্কে ধারণা দেয়। যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন না, তাদের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

মস্তিষ্কের সমস্যাও শরীরের ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, পার্কিনসনস এবং আলঝেইমারের মতো রোগগুলো শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

আসলে, শরীরের ভারসাম্য রক্ষার কাজটি বেশ জটিল। এতে আমাদের চোখ, কান, অস্থিসন্ধি, পেশি এবং মস্তিষ্কের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন হয়।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে, বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সের পর, এই অঙ্গগুলোর কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এর ফলস্বরূপ, শরীরের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা কমে যায় এবং পতন, ফ্র্যাকচার বা আঘাতের ঝুঁকি বাড়ে।

২০২১ সালে, শুধু আমেরিকাতেই ৬৫ বছরের বেশি বয়সের প্রায় ৩৮,০০০ জন ব্যক্তি পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিলেন। তবে, এর থেকে পরিত্রাণের উপায় আছে।

নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

শরীরের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আমাদের দৃষ্টিশক্তি, সংবেদী অঙ্গ এবং কানের ভেতরের অঙ্গের সঠিক সমন্বয় প্রয়োজন। এই অঙ্গগুলোর কোনো একটি দুর্বল হয়ে পড়লে, শরীরের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা কমে যায়।

তাই, নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের এই অঙ্গগুলোর কার্যকারিতা বজায় রাখা প্রয়োজন।

শরীরের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কিছু সাধারণ ব্যায়াম করা যেতে পারে। যেমন – এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা, যোগাভ্যাস করা, দৌড়ানো, বা খেলাধুলা করা।

এছাড়াও, খালি পায়ে হাঁটা, এমন স্থানে হাঁটা যেখানে পথ সমান নয়, বা চোখের ব্যায়ামের মতো ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোও উপকারী।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি এমন কিছু কাজ করা উচিত যা আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। কোনো কাজ করার সময় মনোযোগ ধরে রাখতে চেষ্টা করা, যেমন – হাঁটার সময় পছন্দের কোনো গান শোনা অথবা কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করা।

এছাড়াও, আমাদের খাদ্যভ্যাসেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা এবং পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের ভারসাম্য রক্ষার জন্য খুবই জরুরি।

সুতরাং, শরীরের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা বাড়াতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক সুস্থতার দিকে নজর রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা আমাদেরকে সুস্থ রাখতে পারে এবং আমাদের বয়স্ক জীবনকে আরও আনন্দময় করে তুলতে পারে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *