শিরোনাম: বন্ধুদের ভুলে ভরা কাণ্ডে হাসপাতালে, প্লাস্টারের খাঁচায় বন্দি এক যুবক!
১৯৯৫ সালের ঘটনা। ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে, বন্ধুদের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তানভীর। বন্ধু কেটের ফাইনাল আর্ট পরীক্ষার প্রজেক্ট ছিল একটি ক্লাসিক্যাল ভাস্কর্যের আদলে পুরুষাঙ্গের ছবি তৈরি করা।
মডেল হিসেবে কেট তানভীরকে রাজি করান। কেটের পারিবারিক বাগানেই এই কাজটি করার সিদ্ধান্ত হয়।
গরমের দিন ছিল সেটি। শরীরের লোমগুলোতে ভালোভাবে বেবি অয়েল মাখিয়ে, শুধুমাত্র আন্ডারওয়্যার পরে তানভীরকে চিৎ হয়ে শুতে বলা হলো। এরপর শিল্পী বন্ধু কেট ধীরে ধীরে প্লাস্টারের মিশ্রণটি তাঁর সারা শরীরে ঢালতে শুরু করেন, গলা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত।
শুরুতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি, কিন্তু প্লাস্টার শক্ত হতে শুরু করার সাথে সাথেই অস্বস্তি বাড়তে থাকে। গরমও লাগছিল বেশ।
“আমি এবার উঠতে চাই”, তানভীর অস্থির হয়ে বলেন। ততক্ষণে অবশ্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। প্লাস্টার এতটাই শক্ত হয়ে গিয়েছিল যে, সামান্য নড়াচড়ারও উপায় ছিল না।
এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শুরু হলো তাঁর।
চিৎকার শুনে ছুটে আসেন তাঁদের বন্ধু এড। তিনিই খবর দেন অ্যাম্বুলেন্সে। এর কিছুক্ষণ পরেই হাজির হয় দুটি ফায়ার ইঞ্জিন।
ফায়ার ডিপার্টমেন্টের কর্মীরা এসে হাজির হন হাসিমুখে। এরপর শুরু হয় প্লাস্টার কাটার চেষ্টা। হাতুড়ি-শাবল দিয়ে চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি।
এরপর আনা হলো গরম জল, কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। যেন পাথরের খাঁচায় বন্দী হয়ে গেলেন তানভীর!
অনেক কষ্টে ছয় জন মিলে তাঁকে একটি সরু গলি দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে তোলেন। এরপর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা মিলে অনেকটা কষ্টের পর প্লাস্টার খোলেন।
পুরো শরীর মোমের মত করে তোলার মতোই ছিল সেই প্রক্রিয়া।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বন্ধুদের সাথে রাতের বেলা বের হয়েছিলেন তানভীর। বন্ধুদের সাথে হাসিখুশি থাকলেও, দিনের ঘটনার মানসিক চাপ সামলাতে পারেননি তিনি। এক পর্যায়ে কেঁদেও ফেলেছিলেন।
ঘটনাটি দ্রুতই স্থানীয় সংবাদপত্রে ছড়িয়ে পরে, এরপর জাতীয় মিডিয়াতেও আসে খবরটি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছবি তুলেছিলেন, যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
সেই সময় তানভীর অভিনেতা হতে চেয়েছিলেন। ঘটনাটির পর তাঁর নাম জুড়ে বিভিন্ন মজাদার শিরোনাম তৈরি করা হয়, যেমন – ‘সম্পূর্ণভাবে প্লাস্টার করা’ (Absolutely Plastered) অথবা ‘ভুল অভিনেতা’ (Badly Cast)।
পরবর্তীতে, একটি টেলিভিশন শো-তে কেটের সাথে উপস্থিত হয়েছিলেন তানভীর। এমনকি, তাঁর এই অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে একটি মার্কিন প্রযোজনা সংস্থা প্যারোডি তৈরি করে।
আজকাল তানভীর একটি ব্যান্ডে গিটার বাজান। বন্ধু কেটের সাথে তাঁর সম্পর্ক এখনো অটুট। ভবিষ্যতে হয়তো তাঁদের এই মজার ঘটনাটি আবার মঞ্চে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা আছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান