ঐতিহ্য বাঁচিয়ে: পুরনো পাস্তা কারখানায় অপেরা শিল্পীদের গোপন জগৎ!

ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধন: ইতালির পুরোনো পাস্তা কারখানায় অপেরার সোনালী অতীত।

ইতালির রাজধানী রোমের কেন্দ্রস্থলে, সার্কাস ম্যাক্সিমাসের কাছে অবস্থিত এক সময়ের পাস্তা তৈরির কারখানা, যা এখন “তেatro dell’Opera” নামে পরিচিত।

বাইরের কোলাহল থেকে দূরে, কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই পুরোনো কারখানায় আজও ইতালীয় অপেরার ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার এক অন্যরকম প্রচেষ্টা চলছে।

এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলা অপেরা হাউসের নানা কর্মকাণ্ড যেন আজও শিল্প আর ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

পুরোনো এই কারখানাটি এখন অপেরা হাউসের বিশাল গুদামঘর ও কর্মশালায় পরিণত হয়েছে।

এখানে সংরক্ষিত আছে মঞ্চের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন দৃশ্যপট, প্রায় ৭০,০০০ পোশাক এবং আরও অনেক উপকরণ।

এই পোশাকগুলো তৈরি করা হয় একেবারে চিরাচরিত পদ্ধতিতে, যা বর্তমান ডিজিটাল যুগে সত্যিই বিরল।

এ বছর, বিখ্যাত সুরকার গিয়াকোমো পুচ্চিনির “তোস্কা” অপেরার ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে, এখানকার পোশাক নকশাকার, দর্জি এবং অন্যান্য কর্মীরা মূল নকশাগুলো পুনরুদ্ধার করতে দিনরাত কাজ করছেন।

আঠারো শতকের রোমের পটভূমিতে তৈরি এই অপেরার গল্প প্রেম, নিষ্ঠুরতা আর ষড়যন্ত্রের এক অসাধারণ চিত্র।

“তোস্কা”র পোশাকের ডিজাইন সম্পর্কে অপেরা হাউসের পোশাক পরিচালক আনা বিয়াজ্জিওত্তি জানান, সৌভাগ্যবশত, প্রতিটি পোশাকের বিস্তারিত স্কেচ এখনো বিদ্যমান।

তাঁর দল মূল ডিজাইনগুলি পুনরুদ্ধার করে সময়ের রুচি এবং কাপড়ের মান বজায় রেখেছেন।

আনা বিয়াজ্জিওত্তির তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩০ জন দর্জি এই কারখানায় কাজ করেন।

তাঁদের দক্ষ হাতে তৈরি হয় অপেরা ও ব্যালে পরিবেশনার জন্য প্রতি বছর প্রায় ৭০০টি পোশাক।

এই পোশাকগুলো পরে গুদামঘরে সংরক্ষণ করা হয়।

ঐতিহ্য আর আধুনিকতার এই যুগলবন্দীতে, পুরনো দিনের কারুকার্য আজও অমলিন।

কারখানার উপরের তলার বিশাল স্থানটিতে সেট ডিজাইনাররা কাজ করেন।

তাঁরা প্রাচীন দরজা, খিলান, মূর্তি এবং ফ্রেস্কোগুলোর ত্রিমাত্রিক দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার জন্য বিশাল ক্যানভাসের উপর রং করেন।

মঞ্চের জন্য উপযুক্ত দৃশ্য তৈরি করতে তাঁরা পুরোনো দিনের নকশার সাহায্য নেন।

সেট ডিজাইন বিভাগের পরিচালক দানিলো মানচিনি জানান, বর্তমানে অনেক স্থানেই পেইন্টিং করা সেটের পরিবর্তে এলইডি স্ক্রিন ব্যবহার করা হচ্ছে।

কিন্তু রোম অপেরা হাউসে এখনো পুরনো দিনের ঐতিহ্যকে ধরে রাখা হয়েছে।

অপেরার সঙ্গীত পরিচালক মিশেল মারিওত্তি এবং অন্যান্য কলাকুশলীরা পুচ্চিনির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তাঁদের মতে, পুচ্চিনি শুধু সঙ্গীতের মাধুর্য সৃষ্টি করেননি, বরং তাঁর কাজের মাধ্যমে অপেরাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *