বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে হবু শাশুড়ির মন্তব্যে মন খারাপ কনের। সম্প্রতি, বিয়ের পোশাক কিনতে যাওয়ার পরে তাঁর হবু শাশুড়ি তাঁকে ওজন কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এই ঘটনায় বেশ আহত হয়েছেন কনে।
ঘটনাটি ঘটেছে আগামী এপ্রিল মাসে বিয়ে করতে যাওয়া এক তরুণীর সঙ্গে। তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের প্রেমিককে বিয়ে করতে চলেছেন। “আমি আমার হবু শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে খুব একটা মিশে না থাকলেও, সবসময় তাঁদের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পেয়েছি”, এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু বিয়ের পোশাক কেনার ঘটনার পর থেকে তাঁর মনে কিছু প্রশ্ন দানা বেঁধেছে।
জানা যায়, সম্প্রতি বিয়ের পোশাক কিনতে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। তাঁর হবু শাশুড়ি সেখানে যেতে পারেননি। বিয়ের পোশাক পরে ছবি তোলার পরে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। ছবিগুলো পাঠিয়েছিলেন হবু শাশুড়িকে। ছবিগুলো দেখে তাঁর শাশুড়ি নাকি বলেছিলেন, “পোশাকটা তোকে ভালো মানিয়েছে, তবে কয়েক কেজি কমালে আরও ভালো লাগবে।”
কনে জানিয়েছেন, ওজন কমানোর কোনো ইচ্ছাই তাঁর নেই। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য তিনি একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন। তাঁর কথায়, “এই ধরনের মন্তব্য আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। বিশেষ করে যিনি সবসময় আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছেন, তাঁর কাছ থেকে এমন কথা অপ্রত্যাশিত ছিল। আমি জানি, বয়স্করা হয়তো খারাপ কিছু বোঝাননি, কিন্তু ছোটবেলা থেকে শরীরের গঠন নিয়ে আমার মধ্যে কিছু দ্বিধা ছিল, তাই এমন মন্তব্যে মনে হয়েছে, আমি যেমন আছি, তেমনটা হয়তো যথেষ্ট সুন্দর নই।” তিনি আরও জানান, তাঁর উচ্চতা অনুযায়ী তাঁর ওজন সঠিক আছে।
বিষয়টি নিয়ে তিনি যখন তাঁর হবু বরের সঙ্গে কথা বলেন, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। কনে জানিয়েছেন, “আমার বর সবসময় আমাকে সমর্থন করে এবং আমার শারীরিক গঠন নিয়ে কোনো মন্তব্য করে না। তবে, সে হয়তো বিষয়টি অন্যভাবে নিয়েছে। সে ভেবেছিল, আমি ওজন কমাতে চাই। তাই সে বলে, ‘চিন্তা কোরো না, আমরা জিমে যাওয়া শুরু করব, বিয়ের আগে ভালো একটা চেহারা হবে।’”
কনের মতে, তাঁর হবু বরের এই কথায় তিনি আরও বেশি হতাশ হয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “আমার মনে হয়েছিল, যেন সেও আমার ওজন কমানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।” তিনি যখন তাঁর হবু বরকে তাঁর এই মন্তব্যের কারণ জানতে চান, তখন তিনি কোনো উত্তর দেননি।
কনে জানান, তিনি চান না তাঁর হবু বর তাঁর মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করুক বা ক্ষমা চাইতে বলুক। তিনি শুধু চেয়েছিলেন, তাঁর বর তাঁকে বোঝাক যে সুন্দর হওয়ার জন্য ওজন কমানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু তেমনটা না হওয়ায় তিনি বেশ হতাশ।
ভবিষ্যতে তিনি শাশুড়ির সঙ্গে তাঁর শারীরিক গঠন নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না। তবে, তিনি মনে করেন, তাঁর এই অনুভূতির কথা জানানো উচিত কিনা।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম রেডডিটে এই ঘটনার কথা জানানোর পরে অনেকেই কনের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, হবু শাশুড়ির এই ধরনের মন্তব্য করা উচিত হয়নি। যদিও অনেকে কনেকে বিষয়টি অন্যভাবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন।
একজন মন্তব্য করেছেন, “আমি আমার মাকে অনেকবার বলেছি, অন্যদের ওজন নিয়ে কথা বলতে না, কিন্তু তিনি শোনেননি। তিনি সারাজীবন ধরে একই ৫ কেজি ওজন কমানোর কথা বলছেন। তাঁর সারা দিনের চিন্তা এটাই, তাই তিনি মনে করেন, অন্যদেরও হয়তো একই লক্ষ্য।”
আরেকজন পরামর্শ দিয়েছেন, ছবিতে পোশাকগুলো হয়তো সেভাবে ভালো দেখাচ্ছে না। কারণ, পোশাকগুলো হয়তো তাঁর শরীরের সঙ্গে পুরোপুরি ফিট ছিল না অথবা ভালো সাপোর্টযুক্ত অন্তর্বাসের অভাব ছিল। তবে, আসল সমস্যা হল কনের হবু বরের কথা।
একজন মন্তব্যকারী আরও যোগ করেছেন, “শাশুড়ির কথাগুলো এড়িয়ে যান, কিন্তু আপনার হবু বরের কথাগুলো এড়িয়ে যাবেন না। যদি সে মনে করে আপনার ওজন কমানো দরকার এবং সে কথা মায়ের মাধ্যমে জানাচ্ছে, তবে এটা খুবই খারাপ কাজ। তাকে জিজ্ঞাসা করুন কেন সে সরাসরি আপনাকে কথাটি বলতে পারল না।”
আরেকজন ব্যবহারকারী পরামর্শ দিয়েছেন, “এটা হয়তো প্রজন্মের একটা সমস্যা। আপাতত বিষয়টি এড়িয়ে যান। ভবিষ্যতে এমন কিছু ঘটলে, আপনি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত থাকবেন। যদি এখনই আপনি সীমা নির্ধারণ করতে চান এবং তাঁকে (শাশুড়িকে) কিছু বলতে চান, সেটাও সঠিক।”
তথ্য সূত্র: পিপল