ক্যালিফোর্নিয়ার ফাস্ট ফুড কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধির একটি নতুন আইন কার্যকর হওয়ার এক বছর পর এর প্রভাব নিয়ে বিতর্ক চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ফাস্ট ফুড কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধির একটি নতুন আইন কার্যকর হওয়ার এক বছর পর এর প্রভাব নিয়ে বিতর্ক চলছে। এপ্রিল ২০২৪ থেকে কার্যকর হওয়া এই আইনের ফলে ফাস্ট ফুড কর্মীদের ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় ২০ ডলারে (প্রায় ২,৩০০ টাকা, ৩১শে মে, ২০২৪-এর বিনিময় হার অনুযায়ী) উন্নীত করা হয়েছে।
এর ফলে একদিকে যেমন কর্মীদের আয় বেড়েছে, তেমনি অনেক দোকানে কাজের ঘণ্টা কমানো এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
এই আইনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ফাস্ট ফুড শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। যারা আগে হয়রানির শিকার হতেন এবং যাদের পক্ষে সংসার চালানো কঠিন ছিল, তাদের জীবনে এসেছে পরিবর্তন।
যেমন, লস অ্যাঞ্জেলেসের উইংস্টপ-এর কর্মী এডগার রেসিনোস জানিয়েছেন, এখন তিনি খাবারের খরচ এবং ভাড়ার টাকা দিতে পারছেন। সান হোসে-র একটি ওয়েইনারশ্নিটজেলের কর্মী সেলভিন মার্টিনেজ বলেছেন, মজুরি বাড়ার কারণে তিনি এখন পরিবারের খরচ যোগাতে এবং সঞ্চয় করতে পারছেন।
তবে, এই মজুরি বৃদ্ধির ফলে কিছু সমস্যাও তৈরি হয়েছে। অনেক কর্মী অভিযোগ করেছেন, তাদের কাজের ঘণ্টা কমে গেছে।
এর কারণ হিসেবে জানা যায়, রেস্টুরেন্ট মালিকরা বলছেন, তাদের কর্মীদের মজুরি বাড়ানোর কারণে ব্যবসার খরচ বেড়েছে, তাই তারা কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন অথবা কর্মীদের কাজের সময় কমাচ্ছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার অনেক ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট মালিক ব্যবসার খরচ কমাতে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছেন।
কর্মসংস্থানের উপর এই আইনের প্রভাব নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এই মজুরি বৃদ্ধির কারণে ফাস্ট ফুড শিল্পে কর্মসংস্থান কমেছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাস পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রায় ৩.১ শতাংশ কর্মী কমেছে। তবে, অন্য অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এর পেছনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং রাজ্যের দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থাও একটি কারণ হতে পারে।
তাদের মতে, মজুরি বৃদ্ধি কর্মসংস্থান হ্রাসের মূল কারণ নয়।
এই মজুরি বৃদ্ধির ফলে ব্যবসার উপরও প্রভাব পড়েছে। কিছু রেস্টুরেন্ট মালিক তাদের ব্যবসার টিকে থাকা নিয়ে চিন্তিত।
লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি ম্যাকডোনাল্ডস-এর ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক কেররি হারপার-হাওয়ি জানিয়েছেন, এই আইনের কারণে তাদের ব্যবসার আয় কমে গেছে এবং কর্মীদের কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হয়েছে।
তিনি আরও জানান, খরচ কমাতে তারা খাদ্য সামগ্রীর দামও বাড়িয়েছেন, যার ফলে কম মজুরির কর্মচারীরা খাবার কেনা কমিয়ে দিয়েছে।
যদিও কর্মীদের মজুরি বেড়েছে, তবে কাজের ঘণ্টার কাটছাঁট এবং কিছু ক্ষেত্রে কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো ঘটনাগুলো উদ্বেগের কারণ। অর্থনীতির পণ্ডিতরা বলছেন, ফাস্ট ফুড খাতে কাজের ঘণ্টার নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই।
তবে, কর্মীদের অভিজ্ঞতা এবং মালিকদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, এই মজুরি বৃদ্ধির ফলে কর্মপরিবেশে কিছু পরিবর্তন এসেছে।
সব মিলিয়ে, ক্যালিফোর্নিয়ার ফাস্ট ফুড কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধি একটি জটিল বিষয়। একদিকে এটি শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে, অন্যদিকে ব্যবসার উপর ফেলেছে বাড়তি চাপ।
এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন