কানাডার পার্লামেন্ট খুলতে যাচ্ছেন রাজা তৃতীয় চার্লস, ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগে প্রধানমন্ত্রী কার্নি।
আগামী ২৭শে মে তারিখে কানাডার পার্লামেন্ট (সংসদ)-এর অধিবেশন উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন রাজা তৃতীয় চার্লস। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, এই ঘটনা বর্তমান সময়ের গুরুত্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। একইসঙ্গে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কার্নি।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ট্রাম্পের কানাডার সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি এবং শুল্ক আরোপের বিষয়গুলো প্রধান আলোচনার বিষয় ছিল। নির্বাচনের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে কার্নি জানান, আগামী মঙ্গলবার তিনি হোয়াইট হাউসে (White House) ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন।
ট্রাম্প এর আগে বেশ কয়েকবার কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং কিছু কানাডীয় পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। কার্নি এই পদক্ষেপগুলোকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের পুরনো সম্পর্ক, যা পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছিল, তা এখন অতীত।” কার্নি আরও যোগ করেন, “এখন প্রশ্ন হলো, ভবিষ্যতে আমাদের দেশগুলো কীভাবে সহযোগিতা করবে।”
কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে কার্নি বলেন, এখন এই সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করতে হবে।
নির্বাচনের ফলাফলে কার্নির নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি (Liberal Party) একটি সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে যাচ্ছে এবং তাদের কমপক্ষে ১৬৮টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল হিসেবে কনজারভেটিভ পার্টি (Conservative Party) ১৪৪টি আসন পেতে পারে।
এছাড়াও, ব্লখ কুইবেকোয়া (Bloc Québécois) ২৩টি, নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (New Democratic party) ৭টি এবং গ্রিন পার্টি (Greens) ১টি আসন পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী কার্নি নির্বাচনের উচ্চ অংশগ্রহণের প্রশংসা করে বলেন, সব দলের নেতারা দ্রুত এবং সম্মানের সঙ্গে ফলাফল মেনে নিয়েছেন।
তিনি জানান, কনজারভেটিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত কোনো সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলে, উপ-নির্বাচন (উপ-নির্বাচন) অনুষ্ঠিত হবে। তখন দলের নেতা পিয়েরে পয়েলিয়েরে (Pierre Poilievre)-কে নতুন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হবে।
কার্নি আরও জানান, তিনি জাস্টিন ট্রুডোর (Justin Trudeau) মতো নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি করার কথা ভাবছেন না, যা তার সংখ্যালঘু সরকারের টিকে থাকার নিশ্চয়তা দিতে পারে।
তিনি বলেন, লিবারেল পার্টি জনগণের কাছ থেকে শক্তিশালী সমর্থন পেয়েছে এবং কানাডার ইতিহাসে তারা সর্বাধিক ভোট লাভ করেছে। কার্নি আরও উল্লেখ করেন, কানাডীয়রা একটি নতুন সরকার নির্বাচিত করেছে, যারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মোকাবিলা করবে এবং একটি শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলবে।
১২ই মে তারিখে মন্ত্রিসভা (cabinet) ঘোষণা করা হবে এবং ২৭শে মে পার্লামেন্ট পুনরায় বসবে, যা কানাডার সার্বভৌমত্বকে আরও সুসংহত করবে।
উল্লেখ্য, পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় পর কোনো ব্রিটিশ রাজা বা রানী কানাডার পার্লামেন্ট (সংসদ) উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। এর আগে, ১৯৫৭ সালে কুইন এলিজাবেথ দ্বিতীয় (Queen Elizabeth II) অটোয়ায় (Ottawa) পার্লামেন্ট (সংসদ) উদ্বোধন করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী কার্নি এও স্বীকার করেছেন যে, ভোটারদের একটি বড় অংশ এমন কিছু বিষয়ে উদ্বিগ্ন, যা তারা মনে করেন লিবারেল সরকার এখনো পুরোপুরি সমাধান করতে পারেনি।
নির্বাচনের আগে, কনজারভেটিভ পার্টি ‘অপরাধ দমনের’ ওপর জোর দিয়েছিল।
কার্নি শুক্রবার জানান, তার দল অপরাধীদের নিরাপত্তা হুমকির কারণ হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে, বিশেষ করে গাড়ি চুরি, বাড়িতে হামলা এবং মানব পাচারের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া কঠিন করে তুলবে।
রিয়েল এস্টেট বাজারকে আরও সহজলভ্য করতে কার্নি নতুন আবাসন তৈরি এবং নতুন নির্মাণে কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আসন্ন বৈঠক প্রসঙ্গে কার্নি বলেন, তিনি প্রকাশ্যে কোনো আলোচনা করবেন না।
তিনি আরও জানান, বৈঠকে কানাডার পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ এবং সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
কার্নি ইঙ্গিত দেন, ওই বৈঠকে কোনো ইতিবাচক ফল নাও আসতে পারে।
ফেনটানিল (Fentanyl) পাচারের কারণে শুল্ক আরোপের বিষয়ে কার্নি বলেন, এই বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কারণ রয়েছে।
তিনি বলেন, “ফেনটানিলের সঙ্গে সম্পর্কিত শুল্ক কেন এখনো বহাল আছে, তা আমরা বুঝি না।” ট্রাম্পের কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য করার প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় কার্নি বলেন, কানাডা এই ধরনের কোনো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান