দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এলজিবিটি কমিউনিটির উপর নিপীড়ন: এক চাঞ্চল্যকর গল্প!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, নাৎসি জার্মানির গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে এলজিবিটি কমিউনিটির উপর নেমে আসা অত্যাচারের এক হৃদয়বিদারক গল্প নিয়ে রচিত হয়েছে মিলো টডের নতুন উপন্যাস ‘দ্য লিলাক পিপল’। সম্প্রতি প্রকাশিত এই উপন্যাসটি বার্লিনের এক ট্রান্সজেন্ডার পুরুষের জীবনকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকাময় দিনগুলিতে চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন।

উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট ১৯৩০-এর দশকের বার্লিন শহর। এখানকার ‘এলডোরাডো ক্লাব’ ছিল শহরের গে-কমিউনিটির প্রাণকেন্দ্র। গল্পের প্রধান চরিত্র বার্টির জীবন আবর্তিত হয়েছে এই ক্লাবকে ঘিরে। বার্টি ছিলেন একজন ট্রান্স ম্যান, যিনি দিনের বেলায় ‘ইনস্টিটিউট অফ সেক্সুয়াল সায়েন্স’-এ কাজ করতেন, যেখানে কুইয়ার (queer) সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার বিষয়ে গবেষণা চলত।

কিন্তু হিটলারের ক্ষমতা লাভের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। নাৎসি বাহিনী এই ইনস্টিটিউটে হানা দেয় এবং এলডোরাডো ক্লাব বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই কুইয়ার সম্প্রদায়ের মানুষের উপর নিপীড়ন বাড়তে থাকে। বার্টি এবং তাঁর বান্ধবী সোফি জীবন বাঁচাতে শহর ছেড়ে একটি খামারে আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁদের পরিচয় হয় এক তরুণ ট্রান্সজেন্ডার পুরুষের সঙ্গে, যিনি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। বার্টি ও সোফি তাঁদের জীবন দিয়ে হলেও তাঁকে রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন।

তাঁদের একমাত্র উপায় ছিল সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়া।

উপন্যাসটির একটি অংশে, বার্টি ও তাঁর বন্ধু গার্টের একটি ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। একদিন রাতে মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফেরার পথে, তাঁদের এক পুলিশ অফিসারের মুখোমুখি হতে হয়। অফিসার তাঁদের সন্দেহজনক আচরণ এবং পোশাকের কারণে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। সে সময় বার্টির কাছে ছিল ‘ট্রান্সভেস্টাইট কার্ড’, যা বিশিষ্ট যৌন বিশেষজ্ঞ ম্যাগনুস হিরশফেল্ডের দেওয়া।

এই কার্ডের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের পরিচয় দেন এবং পুলিশের সন্দেহ থেকে মুক্তি পান।

ঐতিহাসিক এই প্রেক্ষাপটে, লেখক এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি হওয়া অবিচার এবং তাঁদের টিকে থাকার লড়াইকে তুলে ধরেছেন। ‘দ্য লিলাক পিপল’ বইটি শুধু একটি উপন্যাস নয়, বরং যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং সমাজের প্রান্তিক মানুষের প্রতি হওয়া অত্যাচারের এক জীবন্ত দলিল।

তথ্যসূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *