বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী এবং টিভি উপস্থাপকের বিতর্ক: বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে বিস্ফোরক কথোপকথন।
বিখ্যাত বক্সার মোহাম্মদ আলী, যিনি একাধারে তার ক্রীড়াশৈলী এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জন্য পরিচিত, ১৯৬০-এর দশকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। সম্প্রতি, ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে তার একটি পুরনো সাক্ষাৎকারের ক্লিপিংস নতুন করে আলোচনায় এসেছে, যেখানে আলী শ্বেতাঙ্গদের সম্পর্কে কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন।
এই সাক্ষাৎকারের সূত্র ধরে আলী এবং ফ্রস্টের মধ্যে হওয়া কথোপকথনগুলো নিয়ে নতুন একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হয়েছে, যা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
১৯৬৮ সালে ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে আলাপকালে আলী, যিনি একসময় “ক্যাসিয়াস ক্লে” নামে পরিচিত ছিলেন, সরাসরি বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি, শ্বেতাঙ্গরা শয়তান।” এই মন্তব্যের পরেই ফ্রস্ট বিষয়টির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তাদের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ হয় এবং আলী তার কথার সমর্থনে বাইবেল থেকে উদ্ধৃতি দেন। সাক্ষাৎকারে আলী, কৃষ্ণাঙ্গদের মুক্তি এবং শ্বেতাঙ্গদের প্রতি বিদ্বেষের কারণ ব্যাখ্যা করেন।
আলী ১৯৬৪ সালে “ইসলাম ধর্ম”-এ দীক্ষিত হওয়ার পর বর্ণবাদ ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো শুরু করেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোয় তার বক্সিং ক্যারিয়ারে ছেদ পড়েছিল।
আলী সবসময় তার বিশ্বাসের প্রতি অবিচল ছিলেন এবং সমাজের দুর্বল শ্রেণীর মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন।
তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আলীর দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসে। ২০০২ সালে ফ্রস্টের সঙ্গে তার শেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “শয়তান যে কোনো মানুষের মধ্যেই থাকতে পারে, তা যে কোনো বর্ণের হতে পারে। এটা মানসিকতার ব্যাপার, বর্ণের নয়।”
“ডেভিড ফ্রস্ট বনাম মোহাম্মদ আলী” নামের এই প্রামাণ্যচিত্রে আলী এবং ফ্রস্টের মধ্যকার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের অংশ তুলে ধরা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে অলিম্পিয়ান জেসি ওয়েন্স, অ্যাক্টিভিস্ট জেসি জ্যাকসন, রাজনীতিবিদ শার্লি চিসলম, ব্ল্যাক প্যান্থার-এর প্রতিষ্ঠাতা হিউই পি নিউটনসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাক্ষাৎকারও রয়েছে।
আলী এবং ফ্রস্টের মধ্যেকার কথোপকথন শুধু একটি সাক্ষাৎকারের বিষয় ছিল না, বরং তা ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এটি বর্ণবাদ, ধর্ম, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে গভীর আলোচনার জন্ম দেয়। মোহাম্মদ আলীর জীবন ও কর্ম আজও সারা বিশ্বের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।
তথ্য সূত্র: পিপল