সাইপ্রাসের উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বাড়ছে। সেখানকার তুর্কি-অধ্যুষিত অঞ্চলে ইসলামি প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরদোগান এই প্রতিবাদকে ‘বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সম্প্রতি উত্তর সাইপ্রাস সফরে গিয়ে এরদোগান সেখানকার জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা তুরস্ক ও সাইপ্রাসের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চাইছে, তারা সফল হবে না। এর আগে, তিনি একটি নতুন সরকারি ভবনের উদ্বোধন করেন। এই সফরে তিনি বিতর্কিত একটি আইনের প্রতি সমর্থন জানান, যেখানে স্কুলগুলোতে নারীদের হিজাব পরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এই আইনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে সেখানকার সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে, বহু বছর ধরে ধর্মনিরপেক্ষ জীবনযাত্রা অনুসরণ করা তুর্কি সাইপ্রিয়টরা এর তীব্র বিরোধিতা করছেন। তাদের মতে, এই আইন তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানছে। গত শুক্রবার রাজধানী নিকোশিয়াতে হাজার হাজার মানুষ এই আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে।
তারা ‘আমাদের ভূমি থেকে হাত সরিয়ে নাও’ স্লোগান দেয়। বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, এই আইন তাদের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়কে দুর্বল করবে।
শিক্ষক সংগঠনসহ বিভিন্ন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, এই আইন এরদোগানের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ। তারা একে শিশুদের অধিকারের পরিপন্থী হিসেবেও দেখছেন। বিক্ষোভকারীরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, তুরস্কের এই ধরনের হস্তক্ষেপ তারা মেনে নেবে না।
১৯৭৪ সালে তুরস্ক সাইপ্রাসে সামরিক অভিযান চালিয়ে দেশটির উত্তরাঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর থেকে এই অঞ্চলটি আন্তর্জাতিকভাবে কেবল তুরস্কের স্বীকৃতি নিয়ে একটি স্ব-শাসিত অঞ্চল হিসেবে টিকে আছে। এরদোগান এই অঞ্চলের প্রতি তুরস্কের সমর্থন অব্যাহত রাখতে চান।
এই পরিস্থিতিতে এরদোগান ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’-এর ওপর জোর দিয়েছেন। তার মতে, গ্রিক ও তুর্কি সাইপ্রিয়টদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিবাদ মীমাংসার এটাই একমাত্র পথ। তিনি বলেন, তুরস্ক ও উত্তর সাইপ্রাসের যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি হলো দুই রাষ্ট্র সমাধান।
বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, উত্তর সাইপ্রাসে তুরস্কের প্রভাব বিস্তারের কারণে তারা নিজেদের ‘ভূমি’তেই সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছেন। তাদের অভিযোগ, তুরস্ক থেকে আসা লোকজনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, যা স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে এরদোগানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং নিজেদের কণ্ঠস্বর সোচ্চার করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান