ভবিষ্যতের ইঙ্গিত! ব্যবসায়ীরা যে ২টি শব্দ ব্যবহার করছেন!

আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার কারণে অনেক কোম্পানি তাদের ভবিষ্যৎ আর্থিক পূর্বাভাষ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের আয়ের পূর্বাভাস দেওয়া স্থগিত করতে বাধ্য হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এই প্রবণতা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি খারাপ সংকেত।

যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শুল্ক নীতি এবং বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই শুল্ক নীতি এখনো কার্যকর না হলেও, অনেক কোম্পানি তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।

এর ফলস্বরূপ, তারা তাদের আয়ের পূর্বাভাস দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ মহামারীর সময়েও এমনটা দেখা গিয়েছিল, যখন অনেক কোম্পানি তাদের পূর্বাভাস স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল।

এই পরিস্থিতিতে, বিশ্লেষকদের জন্য পূর্বাভাস তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ, কোম্পানিগুলো তাদের ভবিষ্যৎ আয়ের কোনো ধারণা দিতে পারছে না।

কোম্পানিগুলোর এই ধরনের পদক্ষেপ অর্থনীতির গতিপথ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেয়।

উদাহরণস্বরূপ, গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি স্টেলাంటిস (Stellantis), যারা জিপ (Jeep) এবং ডজ (Dodge)-এর মতো ব্র্যান্ডের মালিক, তারা চলতি বছরের মুনাফা বৃদ্ধির পূর্বাভাস স্থগিত করেছে।

তারা জানিয়েছে, শুল্ক নীতির পরিবর্তনের প্রভাব নির্ধারণ করা কঠিন। জেনারেল মোটরস (General Motors) তাদের ২০২৫ সালের মুনাফা বৃদ্ধির পূর্বাভাস থেকেও সরে এসেছে। এমনকি মার্সিডিজ-বেঞ্জও তাদের পূর্বাভাস স্থগিত করার কথা ঘোষণা করেছে।

প্রযুক্তি খাতেও একই ধরনের চিত্র দেখা যাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম স্ন্যাপ (Snap) তাদের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের আয়ের পূর্বাভাস দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

তারা বাজারের অনিশ্চয়তা এবং বিজ্ঞাপন চাহিদার সম্ভাব্য প্রভাবকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিমান সংস্থা আমেরিকান এয়ারলাইন্স, ডেল্টা, সাউথওয়েস্ট এবং আলাস্কা এয়ারও তাদের আর্থিক পূর্বাভাস প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

ডেল্টা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এড বাস্টিয়ান সতর্ক করেছেন যে, আমেরিকার অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে।

তবে, সব কোম্পানি এখনই তাদের পূর্বাভাস দেওয়া বন্ধ করেনি। ইউপিএস (UPS) জানিয়েছে, তারা এখনই তাদের পূর্বাভাস স্থগিত করবে না, তবে ভবিষ্যতে এমনটা হতে পারে।

ইউপিএস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যারোল টোমে বলেছেন, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে, কারণ শুল্ক নীতিগুলো শেষ পর্যন্ত মার্কিন ভোক্তাদের প্রভাবিত করবে।

বর্তমানে ভোক্তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা খারাপ ধারণা তৈরি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোম্পানিগুলোর পূর্বাভাস স্থগিত করা একটি গুরুতর বিষয়। কারণ, এটি বাজারের অনিশ্চয়তা বাড়ায়।

এই পরিস্থিতিতে, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ (S&P 500)-এর অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর মূল্যায়ন এখনো বেশি থাকলেও, তাদের আয়ের প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা গত ছয় মাসে কমেছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে যেমন সরবরাহ শৃঙ্খলে আঘাত এসেছিল, তেমনি শুল্কের কারণেও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আর্থিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগের কারণ। কারণ, এমন পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভের (Federal Reserve) পক্ষ থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

সরকার ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করছে এবং ফেডারেল রিজার্ভ এখনো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

এই ধরনের খবর বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর সরাসরি প্রভাব নাও ফেলতে পারে, তবে বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা আমাদের দেশের অর্থনীতিতেও পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষ করে, পোশাক শিল্পের মতো রপ্তানি-নির্ভর খাতে এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের দিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *