শিরোনাম: পিএইচডি প্রোগ্রাম ত্যাগ করে, বিবাহ অনুষ্ঠানে কুকুর দেখাশোনার ব্যবসা, দিনে আয় কয়েক হাজার টাকা!
উচ্চশিক্ষার গন্ডি পেরিয়ে ভালো একটা চাকরি—এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েছেন একজন তরুণী। তিনি হলেন রেবেকা ম্যাকব্রাইড।
আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা রেবেকা, শুরুতে জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। কিন্তু পড়াশোনার ষষ্ঠ বছরে এসে তিনি উপলব্ধি করেন, এই পথে তার ভালো লাগছে না। অবশেষে পিএইচডি প্রোগ্রাম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি।
এরপর, তিনি এমন একটি কাজ শুরু করেন যা অনেকের কাছেই হয়তো অভাবনীয়। বর্তমানে ২৬ বছর বয়সী রেবেকা ম্যাকব্রাইড ‘ম্যাকব্রাইড অ্যান্ড গ্রুম’ নামে একটি ব্যবসা চালাচ্ছেন, যেখানে তিনি বিবাহ অনুষ্ঠানে কুকুরদের দেখাশোনার কাজটি করেন।
রেবেকা জানান, “আমি সবসময়ই পশুদের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে ওয়েটার হিসেবে কাজ করার সময়, আমি প্রথম এই ধারণাটি পাই। অনুষ্ঠানে আসা একটি কুকুরকে দেখে আমার মনে হয়েছিল, কেন আমি এই কাজটি করি না?”
নিজের এই নতুন ব্যবসার ধারণা নিয়ে তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পারছিলাম, আমি আসলে কি চাই। আমার মনে হয়েছিল, নিজের জন্য কিছু করা দরকার।” রেবেকার পরিবার এবং তার সঙ্গীরা এই পরিবর্তনে তাকে সমর্থন জুগিয়েছেন।
শুরুতে যদিও এমন একটি বিশেষ ধরনের ব্যবসা শুরু করা বেশ কঠিন ছিল। কারণ, এই ধরনের ব্যবসার ধারণা অনেকের কাছেই ছিল নতুন।
কিন্তু রেবেকা হাল ছাড়েননি। তিনি বিভিন্ন স্থানে গিয়ে তার ব্যবসার প্রচার করেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত তার কাজের ছবি ও ভিডিও আপলোড করতে শুরু করেন। এর ফলস্বরূপ, খুব দ্রুতই তার ব্যবসা জনপ্রিয়তা লাভ করে।
ম্যাকব্রাইড জানান, তার প্রথম বুকিং আসে ব্যবসা শুরুর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে। বর্তমানে তিনি ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি শনিবারে বুকড্।
তিনি প্রতি সপ্তাহে গড়ে তিনটি করে অনুষ্ঠানে কাজ করেন। আয়ারল্যান্ডে তার ব্যবসার মূল কেন্দ্র হলেও, তিনি ইতালি এবং স্পেন থেকেও কাজের প্রস্তাব পেয়েছেন। তবে সময় স্বল্পতার কারণে তিনি এখনো পর্যন্ত সেখানে কাজ করতে পারেননি।
তবে, ২০২৬ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তার ব্যবসার প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
রেবেকার এই কাজের জন্য প্রতিদিনের চার্জ শুরু হয় প্রায় ২৯ হাজার টাকার (মার্কিন ডলারের বিনিময় হার অনুযায়ী)। অনেক ক্লায়েন্ট তাদের বিবাহ অনুষ্ঠানের সময় কুকুরের দেখাশোনার জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিতেও রাজি থাকে, যাতে তারা নিশ্চিন্তে তাদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
রেবেকা বলেন, “কাজের সেরা মুহূর্তগুলো হলো যখন দেখি, কোনো দম্পতি তাদের কুকুরকে নিয়ে বিবাহের মঞ্চে প্রবেশ করছে, অথবা কুকুরটি তাদের আংটি বহন করছে।”
তবে, সব ঘটনা সব সময় সুন্দর নাও হতে পারে। রেবেকা জানান, একবার একটি কুকুরকে তিনি মঞ্চে আংটি নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন, কিন্তু সেটি ভয়ে সেখানেই বসে পড়েছিল।
রেবেকা সাধারণত ল্যাব্রাডর বা গোল্ডেন রিট্রিভার জাতের কুকুরদের সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করেন। তার মতে, এই জাতের কুকুরগুলো খুব বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সবসময় হাসিখুশি থাকে।
ব্যবসার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে রেবেকা তার দল আরও বড় করার পরিকল্পনা করছেন। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার পাশাপাশি তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজি খোলারও চিন্তা করছেন।
যারা নিজেদের স্বপ্নের পথে হাঁটতে দ্বিধা বোধ করেন, তাদের জন্য রেবেকা একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, “সাহসী হন এবং নিজের ভেতরের কথা শুনুন। এমন কিছুতে থাকার কোনো মানে নেই যা আপনাকে আনন্দ দেয় না। জীবন একটাই, তাই নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিন।”
তথ্যসূত্র: পিপল