মরক্কোর বন্দরগুলোতে ইসরায়েলের সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ বাড়ছে, বাড়ছে সংকট।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। দেশটির বিভিন্ন বন্দরে ইসরায়েলের জন্য সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদকারীরা অবরোধের ডাক দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এই পদক্ষেপ জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানানো উচিত।
২০২০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ‘আব্রাহাম চুক্তি’র মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে মরক্কো। এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র বিতর্কিত ওয়েস্টার্ন সাহারার উপর মরক্কোর দাবিকে সমর্থন করে। তবে এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
জানা গেছে, বিক্ষোভকারীরা ডেনমার্কের একটি শিপিং কোম্পানি ‘মার্স্ক’-কে লক্ষ্য করে প্রতিবাদ করছেন। তাদের অভিযোগ, এই কোম্পানিটি ইসরায়েলের জন্য সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনে সহায়তা করে। এমনকি গত বছর স্পেনের বন্দরেও একই ধরনের অবরোধের ঘটনা ঘটেছিল।
সম্প্রতি, তাঞ্জিয়ার বন্দরের কাছে বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে সমবেত হন। তারা ইসরায়েলে যুদ্ধ বিমানের যন্ত্রাংশ বহনকারী একটি জাহাজের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারীদের একজন, ৩৪ বছর বয়সী প্রকৌশলী ইসমাইল লাগাজাউই। তিনি গত বছরও একই ধরনের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন, যার ফলস্বরূপ তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও তিনি আবার বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।
ইসমাইল জানান, প্রতিবাদকারীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার তাদের ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে চাইছে। বিক্ষোভের কারণে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে, মরক্কোর বৃহত্তম শ্রমিক ইউনিয়নও জাহাজ অবরোধের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। দেশটির প্রভাবশালী ইসলামিক সংগঠন ‘আল-আদল ওয়াল ইহসান’-এর সমর্থকরাও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তারা বন্দরগুলোতে প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানাচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে, মরক্কোর সরকার এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। একদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা, যা ওয়েস্টার্ন সাহারার উপর তাদের দাবির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেতে সহায়ক। অন্যদিকে, জনগণের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণ করা। সরকার যদিও বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করছে, তবে তাদের গ্রেপ্তার ও আটকের ঘটনা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।
মরক্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ফলে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানানো এবং গাজায় ত্রাণ সরবরাহ সহজ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস