যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্র ঋণ পরিশোধের চাপ: হাজারো মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত।
যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্র ঋণ পরিশোধের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ফলে কয়েক মিলিয়ন মানুষ এখন চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় এই ঋণ পরিশোধের উপর সাময়িক বিরতি দেওয়া হয়েছিল, যা এখন আবার চালু হওয়ার ফলে ঋণগ্রহীতারা তাদের আর্থিক ভবিষ্যতের ব্যাপারে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। যাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা নেই, তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা।
ফ্লোরিডার বাসিন্দা ৪২ বছর বয়সী ডেভিনা রাশ, যিনি একটি দুর্ঘটনায় আহত ছেলের দেখাশোনার জন্য চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন, তেমনই একজন। প্রায় ৪৯ হাজার ডলার ছাত্র ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় তিনি এখন উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। তার আশঙ্কা, যদি তার বেতন থেকে ঋণ পরিশোধের জন্য টাকা কেটে নেওয়া হয়, তাহলে তাদের খাবার জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তর সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, গত পাঁচ বছর ধরে স্থগিত থাকা ফেডারেল ছাত্র ঋণ পরিশোধের প্রক্রিয়াটি পুনরায় চালু করা হবে। এর ফলে, ডেভিনার মতো আরও ৫০ লক্ষাধিক আমেরিকান এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের অনেকেই কিভাবে এই ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পাবেন, সেই পথ খুঁজছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়ে ঋণ পরিশোধের চাপ বিশেষভাবে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ বর্তমানে দেশটির অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে মন্দার ইঙ্গিত। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক মানুষের পক্ষে জীবন ধারণ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। যাদের ঋণ পরিশোধ করতে সমস্যা হচ্ছে, তাদের উপর এই চাপ আরও বেশি।
কানসাস সিটির ৪৬ বছর বয়সী লেসলি গ্রে নামক একজন থেরাপিস্টের জীবনও এই সিদ্ধান্তের কারণে ওলট-পালট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি জানান, ঋণ পরিশোধের উপর আরোপিত বিরতি তার জন্য “জীবনদায়ী” ছিল, যা তাকে ২০১৭ সালে স্তন ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার পর জমে থাকা চিকিৎসার খরচ পরিশোধ করতে সাহায্য করেছিল।
সরকার ঋণগ্রহীতাদের সমস্যা সমাধানে কিছু পদক্ষেপের কথা জানালেও, ঋণ পরিশোধের প্রক্রিয়াটি তাদের জন্য এখনও বেশ কঠিন। ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য যখন তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে যান, তখন অনেক সময় সঠিক উত্তর পান না।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, তারা ঋণগ্রহীতাদের সাথে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন ডিফল্ট কল সেন্টারের সময় বৃদ্ধি করা এবং ঋণ পরিশোধের বিকল্পগুলো সম্পর্কে ইমেলের মাধ্যমে জানানো। তবে, অনেক ঋণগ্রহীতা এখনও এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পাচ্ছেন না।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিক্ষা দপ্তর সতর্ক করে বলেছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও প্রায় এক কোটি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারেন। এর মধ্যে, ৫০ লক্ষাধিক মানুষ ইতোমধ্যেই ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না এবং আরও ৪০ লক্ষাধিক মানুষ ৯০ দিনের বেশি সময় ধরে কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি।
ঋণ পরিশোধে সমস্যায় পড়া ব্যক্তিদের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, মাসিক কিস্তি পরিশোধ, আয়-ভিত্তিক পরিশোধ পরিকল্পনা গ্রহণ অথবা ঋণ পুনর্বাসন। তবে, অনেক ঋণগ্রহীতার জন্য এই প্রক্রিয়াগুলো বেশ জটিল।
আর্থিক সংকটে জর্জরিত ঋণগ্রহীতারা দেউলিয়া হওয়ার মাধ্যমেও ঋণ পরিশোধ থেকে মুক্তি পেতে পারেন, যদি তারা কিছু শর্ত পূরণ করতে পারেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রক্রিয়াটি আগের তুলনায় কঠিন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণ পরিশোধের সমস্যা এড়াতে হলে, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং ঋণ পরিশোধের একটি উপায় খুঁজে বের করা জরুরি। কারণ, একবার যদি ঋণ খেলাপি হয়ে যায়, তাহলে তা পরিশোধ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ছাত্র ঋণ সংকট সেখানকার অর্থনীতি এবং মানুষের জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং ঋণগ্রহীতাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন