ওয়ারেন বাফেট, যিনি ‘ওমাহা’র ওরাকল’ নামে পরিচিত, শীঘ্রই তার দীর্ঘ কর্মজীবনের সমাপ্তি টানছেন। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগ সংস্থা বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে তিনি এ বছরই অবসর নিচ্ছেন।
৯৪ বছর বয়সী বাফেটের এই বিদায় শুধু একজন ব্যক্তির প্রস্থান নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কারণ, বাফেটের বিনিয়োগ কৌশল এবং ব্যবসায়িক প্রজ্ঞা কয়েক দশক ধরে বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
বাফেটের উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে যাচ্ছেন গ্রেগ অ্যাবেল। বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের শক্তি বিভাগের প্রধান অ্যাবেল দীর্ঘদিন ধরে বাফেটের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। বাফেট তাঁর ব্যবসার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পরিচিত, এবং অ্যাবেল সেই নিরিখে সবসময়ই উজ্জ্বল ছিলেন।
ওয়ারেন বাফেটের জন্ম ১৯৩০ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের ওমাহা শহরে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন বিনিয়োগ পরামর্শদাতা এবং পরে কংগ্রেসম্যান হয়েছিলেন।
বাফেটের বিনিয়োগ জীবন শুরু হয় ১৯৫০-এর দশকে, বাবার বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে কাজ করার মাধ্যমে। এরপর ১৯৫৬ সালে তিনি নিজের বিনিয়োগ সংস্থা খোলেন।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের নিয়ন্ত্রণ নেন, যা শুরুতে একটি বস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানি ছিল। বাফেট এটিকে একটি বিশাল বিনিয়োগ কোম্পানিতে পরিণত করেন।
বাফেটের বিনিয়োগের মূল মন্ত্র ছিল সহজ: ভালো মানের ব্যবসায় কম দামে বিনিয়োগ করুন এবং দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখুন। তিনি সবসময় ব্যবসার গভীরে যেতেন এবং সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানার চেষ্টা করতেন।
শোনা যায়, তিনি প্রতিদিন প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠা পড়তেন। তাঁর এই কৌশল তাঁকে একসময় বিশ্বের শীর্ষ ধনী বানিয়েছিল। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির আকারের সঙ্গে তুলনীয়।
বাফেটের সাফল্যের পেছনে কেবল তাঁর বিনিয়োগ কৌশলই নয়, বরং তাঁর নিজস্ব ব্যক্তিত্বও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার মিটিংগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপচে পড়া ভিড় হয়, যা অনেক সময় ‘পুঁজিবাদী সঙ্গীতের উৎসব’-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়।
সেখানে বাফেট তাঁর বিভিন্ন ব্যবসার প্রতিনিধিদের সাথে মিশতেন এবং শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলতেন।
তবে, বাফেটের এই বিদায়ের পর বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে কেমন হবে, তা এখন দেখার বিষয়। বাফেট নিজেই বলেছেন, কোম্পানির আকার বড় হওয়ার কারণে এখন আগের মতো উচ্চ হারে মুনাফা করা কঠিন।
এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতিতেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। বাফেটের অনুপস্থিতিতে গ্রেগ অ্যাবেল কীভাবে কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে যান, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি। অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ওয়ারেনের মতো আর কেউ নেই। গ্রেগের হাতে বার্কশায়ার ভালোভাবেই পরিচালিত হবে।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন