রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি বলেছেন যে ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন হয়নি এবং তিনি আশা করেন ভবিষ্যতে এর প্রয়োজন হবে না। রবিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সাক্ষাৎকারে পুতিন তার ক্ষমতা গ্রহণের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে কথা বলছিলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া তার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের শক্তি ও উপায় তাদের হাতে রয়েছে।
ইউক্রেন রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালালে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, “আমরা এখনো পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন অনুভব করিনি এবং আমি আশা করি এর প্রয়োজন হবে না।
২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর থেকেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক উইলিয়াম বার্নস বলেছেন, ২০২২ সালের শেষের দিকে এমন একটা সম্ভবনা দেখা দিয়েছিল যে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
বার্নস আরও জানান, ২০২২ সালের শরৎকালে যুক্তরাষ্ট্র এতটাই উদ্বিগ্ন ছিল যে তারা রাশিয়াকে এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছিল। একই সময়ে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও পুতিনকে পারমাণবিক অস্ত্রের আশ্রয় না নিতে সতর্ক করেছিলেন।
নভেম্বর, ২০২৪ এ পুতিন রাশিয়ার পারমাণবিক নীতিমালার একটি নতুন সংস্করণ স্বাক্ষর করেন। এই সংস্করণে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শর্তাবলী কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এমনকি কোনো পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সমর্থনপুষ্ট প্রচলিত অস্ত্রের হামলার প্রতিশোধ হিসেবেও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কূটনৈতিক উপায়ে এই সংঘাত বন্ধ করতে চান বলে জানিয়েছেন। তবে, কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যুদ্ধ বন্ধের জন্য যে শর্তহীন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে ক্রেমলিন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিনের নির্দেশে রাশিয়ান সেনারা ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যার মধ্যে দেশটির দক্ষিণাংশ এবং পূর্বাংশের কিছু অংশও অন্তর্ভুক্ত।
সাক্ষাৎকারে পুতিনকে ক্রেমলিনের অভ্যন্তরে তার ব্যক্তিগত রান্নাঘরে দেখা যায়। তিনি ক্রেমলিনের সংবাদদাতা পাভেল জুরবিনকে চকোলেট এবং রাশিয়ান এক ধরনের দুধের তৈরি পানীয় পরিবেশন করেন।
প্রসঙ্গত, পুতিন ১৯৯৯ সালের শেষ দিনে অসুস্থ বরিস ইয়েলৎসিনের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে জোসেফ স্টালিন ২৯ বছর ধরে দেশটির ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান