টম হ্যাঙ্কসের কন্যার কঠিন শৈশব এবং আত্ম-অনুসন্ধানের যাত্রা।
যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় অভিনেতা টম হ্যাঙ্কসের কন্যা ই.এ. হ্যাঙ্কস, সম্প্রতি তার আত্মজীবনী ‘দ্য টেন’ নিয়ে আলোচনায় এসেছেন। এই বইটিতে তিনি তার মায়ের সঙ্গে কাটানো কঠিন দিনগুলো এবং নিজের জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন।
মায়ের মানসিক অসুস্থতা, মাদকাসক্তি এবং শৈশবের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতাই এই বইয়ের মূল বিষয়।
ই.এ. হ্যাঙ্কসের মা ছিলেন সুসান। তিনিও একসময় অভিনেত্রী ছিলেন, তবে মানসিক অসুস্থতা এবং মাদকাসক্তির কারণে তার জীবন কঠিন হয়ে যায়। ই.এ. হ্যাঙ্কসের শৈশব কেটেছে দারিদ্র্য আর মানসিক অস্থিরতার মধ্যে।
মা সুসানের অপ্রত্যাশিত আচরণে অনেক সময় তাদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত। ১৪ বছর বয়সে, ই.এ. হ্যাঙ্কস তার বাবার কাছে চলে আসেন, যিনি ছিলেন হলিউডের পরিচিত মুখ।
বইটিতে ই.এ. হ্যাঙ্কস তার মায়ের সঙ্গে ১৯৯৬ সালের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। সে সময় তার মা একটি ‘রিক্রিয়েশনাল ভেহিকল’ কিনে পুরো যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে বের হন।
এই ভ্রমণে মায়ের অস্থিরতা, একাকীত্ব এবং ই.এ.-এর সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে। এই ভ্রমণের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ই.এ. হ্যাঙ্কস বলেন, “সেটা ছিল খুবই কঠিন, নীরবে কেটে যাওয়া তিনটি মাস, যা ফ্লোরিডায় গিয়ে শেষ হয়েছিল।”
মা সুসানের মৃত্যুর প্রায় ২০ বছর পর, ই.এ. হ্যাঙ্কস সেই একই রাস্তা ধরে যাত্রা করেন। এই যাত্রাপথে তিনি তার মায়ের জীবনকে নতুন করে বুঝতে চেষ্টা করেছেন।
মায়ের অতীতের অনেক না জানা ঘটনা, তার বেড়ে ওঠা এবং পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কগুলোও তিনি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।
ই.এ. হ্যাঙ্কস তার মায়ের একটি ডায়েরি খুঁজে পান, যেখানে মায়ের জীবনের কিছু গোপন কথা লেখা ছিল। সেই ডায়েরি থেকে জানা যায়, সুসানের নিজের বাবার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ছিল।
ই.এ. হ্যাঙ্কস বলেন, “আমার মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য দিনে দিনে খারাপের দিকে যাচ্ছিল। তার কথাগুলোতে এক ধরনের সত্যতা ছিল।
সম্ভবত, এই ধরনের আঘাত নিয়েই তিনি বড় হয়েছেন, তাই তার জীবনটা আমার কাছে আরও বেশি অর্থপূর্ণ।
লেখিকা তার বাবার কাছ থেকে একটি গাড়ি ধার করে, সেই ভ্রমণে বের হন। তার সঙ্গে ছিল একটি টাইপরাইটার, যা বাবার মতোই তার প্রিয় ছিল।
এই যাত্রাপথে তিনি আমেরিকার ইতিহাস, বিশেষ করে দেশটির বিভাজন এবং বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন করে জানতে পারেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা কাছ থেকে দেখেন।
ই.এ. হ্যাঙ্কস তার বাবার খ্যাতির বিষয়েও কথা বলেছেন। তিনি জানান, বাবার খ্যাতি কীভাবে তার ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবিত করেছে।
বাবার সাফল্যের কারণে অনেক সময় তিনি সাধারণ জীবন থেকে দূরে ছিলেন। তবে তিনি এটাও মনে করেন যে, বাবার কাজের প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে তিনি সম্মান করেন।
ই.এ. হ্যাঙ্কস বর্তমানে ৪৩ বছর বয়সী এবং পেশাগত জীবনে তিনি একজন সাংবাদিক। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করেন এবং তার লেখার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছাতে চান।
‘দ্য টেন’ বইটিতে তিনি তার মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক, শৈশবের স্মৃতি এবং নিজের আত্ম-অনুসন্ধানের গল্প বলেছেন। এই বইটি পাঠকদের পারিবারিক সম্পর্ক, মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্ম-উন্নয়ন সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান