আহত অবস্থায় চরম বিপদে, এগিয়ে এলো ভয়ঙ্কর দেখতে যুবকেরা!

অপ্রত্যাশিত সহায়তা: অপরিচিত কিশোরদের দয়ায় কঠিন সময়ে এক ব্যক্তির ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।

একদিন খেলাধুলা করতে গিয়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পান রফিক সাহেব। ডাক্তার দেখানোর পর জানা গেল, পায়ের হাড় ভেঙে গেছে।

অস্ত্রোপচারের পর কয়েক মাস খুঁড়িয়ে চলতে হবে, তাই স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা। অফিসের কাজ থেকে শুরু করে বাজার করা—সবকিছুই এখন কঠিন।

অনলাইনে হয়তো কিছু জিনিস পাওয়া যাবে, কিন্তু বাড়ির কাছের মুদি দোকান থেকে বাজার করাটা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

রফিক সাহেবের বাড়ির কাছেই ছিল একটি পার্ক। তার ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে পার্কটি দেখা যেত।

তিনি খেয়াল করলেন, প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর কয়েকজন কিশোর-কিশোরীর একটি দল পার্কের পাশে একটি গাছের নিচে জড়ো হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে মাঝে মাঝে সিগারেট খেতে অথবা অন্য কোনো মাদক দ্রব্য সেবন করতেও দেখা যেত।

রফিক সাহেবের মনে হতো, তারা একটু Troublesome প্রকৃতির। মুদি দোকানে যেতে হলে তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে হতো, যা তার কাছে কিছুটা অস্বস্তিকর ছিল।

একদিন, যখন তিনি ক্রাচে ভর করে দোকানে যাচ্ছিলেন, তখন সেই কিশোর-কিশোরীদের দলের একজন তাকে ডাকল। প্রথমে তিনি তেমন গুরুত্ব দেননি, ভেবেছিলেন হয়তো তারা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে।

কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই কয়েকজন কিশোর তার কাছে ছুটে আসে। তারা এগিয়ে এসে তার হাতে থাকা বাজারের ব্যাগটি তুলে নিতে চাইল। রফিক সাহেব প্রথমে একটু দ্বিধা বোধ করলেও, তাদের প্রস্তাবে রাজি হলেন।

এরপর বেশ কয়েক মাস ধরে রফিক সাহেব তাদের কাছ থেকে নানাভাবে সাহায্য পেয়েছেন। যখনই তিনি ক্রাচে ভর করে তাদের পাশ দিয়ে যেতেন, তখনই তারা তার কুশল জানতে চাইত এবং কোনো সাহায্যের প্রয়োজন আছে কিনা—সে বিষয়ে জানতে চাইত।

এমনকি, তারা তার বাড়ির আবর্জনা ফেলার কাজটিও করে দিত। দোকানের লাইনে দাঁড়ালে তারা তাকে আগে যেতে দিত, যাতে তাকে বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে না হয়।

কয়েক মাস পর, যখন কিশোর-কিশোরীরা তাদের স্কুলের শেষ বর্ষে উত্তীর্ণ হলো, তখন রফিক সাহেবের ক্রাচের ব্যবহারও প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল।

তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং তাদের এই মানবিক আচরণের জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি চিঠিও লিখলেন। তিনি মনে করেন, সবারই তাদের এই ভালো কাজের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।

আঘাত পাওয়ার পর অনেক মানুষই তাকে সাহায্য করেছেন, আবার কেউ কেউ ছিলেন একেবারেই উদাসীন।

তবে, রফিক সাহেবের মতে, সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন এই কিশোর-কিশোরীরা।

তিনি বলেন, এই ঘটনার আগে কিশোর-কিশোরীদের সম্পর্কে তার মনে কিছু ভুল ধারণা ছিল, যা এই ঘটনার মাধ্যমে দূর হয়েছে।

তাদের সাহায্য তাকে বুঝিয়েছিল—পরিচিতি নয়, বরং মানুষের আসল পরিচয় পাওয়া যায় তাদের আচরণে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *