মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এখন শুধু শুল্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনায় শুল্কের পাশাপাশি আরও অনেক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছেন, যা বাণিজ্য বাধা হিসেবে বিবেচিত হয়।
এই নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের উপরও।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখন বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিনিময় হারের পরিবর্তন, কৃষি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, কর ব্যবস্থা এবং সীমান্ত সংক্রান্ত জটিলতা দূর করা ইত্যাদি।
ট্রাম্প প্রশাসন দেশগুলোকে এই বিষয়গুলোতে ছাড় দিতে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে, ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
চীনের উপর ইতোমধ্যে এই শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক দেশের পক্ষেই যুক্তরাষ্ট্রের দাবিগুলো মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিবর্তন আনা প্রায় অসম্ভব।
তাছাড়া, অনেক দেশের বাণিজ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ঠিক কী ধরনের ছাড় তারা দেবেন, সে বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
উদাহরণস্বরূপ, কৃষি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনেক দেশেই কিছু কঠোর নিয়ম-কানুন প্রচলিত আছে। যেমন, জাপানে আলু ও চাল আমদানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) হরমোন-যুক্ত গরুর মাংস এবং ক্লোরিন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা মুরগির মাংস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়াও ৩০ মাসের বেশি বয়সী গরুর মাংস আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে।
এই ধরনের বিধি-নিষেধগুলো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট একটি বড় বাধা। কারণ, স্থানীয় কৃষক এবং ভোক্তা সংগঠনগুলো এর বিরোধিতা করে।
জাপানের কথাই ধরা যাক, যুক্তরাষ্ট্রের আলু চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে জাপানে তাদের উৎপাদিত আলু রপ্তানির চেষ্টা করছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কিন্তু জাপানের পক্ষ থেকে তাদের উদ্বেগের একটি তালিকা দিতেই লেগে গেছে কয়েক বছর।
এছাড়াও, ট্রাম্প প্রশাসন ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স বা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)-এর সমালোচনা করেছে। তারা মনে করে, এই ধরনের কর মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য বোঝা স্বরূপ।
যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভ্যাট একটি বাণিজ্য নিরপেক্ষ কর, যা আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। বর্তমানে বিশ্বের ১৭০টির বেশি দেশে এই কর ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুল্কের পাশাপাশি এই বিষয়গুলো উত্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। অর্থাৎ, অন্য দেশগুলো যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি পণ্য কেনে এবং আমেরিকায় বিনিয়োগ করে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তা এখন আলোচনার বিষয়।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পের উপর এর প্রভাব কেমন হবে, কিংবা বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য নতুন কোনো সুযোগ তৈরি হবে কিনা, সেদিকে এখন সংশ্লিষ্ট সকলের নজর।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস