রুমেনিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে, যেখানে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছেন চরম-ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী জর্জ সিমিয়ন এবং ইউরোপপন্থী সংস্কারবাদী নিকুসোর ডান। আগামী ১৮ই মে অনুষ্ঠিতব্য রানঅফ নির্বাচনে নির্ধারিত হবে দেশটির ভবিষ্যৎ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো জোটের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে।
রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে তীব্র আগ্রহ দেখা যায়। সরকারি ফলাফলে জানা যায়, অ্যালায়েন্স ফর দ্য ইউনিটি অফ রোমানিয়ানস (AUR) দলের নেতা জর্জ সিমিয়ন ৪০.৯৬ শতাংশ ভোট পেয়ে সবার থেকে এগিয়ে আছেন। অন্যদিকে, সংস্কারপন্থী বুখারেস্টের মেয়র নিকুসোর ডান ২১ শতাংশ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন।
এই নির্বাচনে মূলত দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমত, ভোটারদের মধ্যে পুরনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, দেশটির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, সেই বিষয়ে দুটি ভিন্ন মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। একদিকে, সিমিয়ন কট্টর জাতীয়তাবাদী আদর্শের অনুসারী, যিনি পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত একটি রোমানিয়ার স্বপ্ন দেখেন। অন্যদিকে, ডানের অবস্থান ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে। তিনি মনে করেন, এই নির্বাচন কার্যত ‘পশ্চিমের পক্ষে’ নাকি ‘পশ্চিমের বিপক্ষে’— সেই বিতর্কের মঞ্চ।
গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তবে কিছু অভিযোগের কারণে সেই নির্বাচন বাতিল করা হয়। এর ফলে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। এবারও নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূল দলগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে।
জর্জ সিমিয়ন নিজেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ (MAGA) আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং তাঁর দল পরিবার, জাতি, বিশ্বাস ও স্বাধীনতার কথা বলে থাকে। তিনি এমন এক সময়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, যখন ইউরোপজুড়ে পপুলিজমের উত্থান ঘটছে।
অন্যদিকে, নিকুসোর ডান দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তিনি ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার পক্ষে এবং দেশের সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেন। নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে থাকা ক্রিয়া আন্তোনেস্কু রানঅফে কোনো প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানাননি।
রুমেনিয়ার প্রেসিডেন্টের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তাই রানঅফ নির্বাচনের ফল দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে গভীর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস